[email protected] সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বেগম রোকেয়াকে ‘কাফের-মুরতাদ’ বলায় রাবি শিক্ষক সমালোচনার মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ৬:১২ পিএম

সংগৃহীত ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ-কাফের’ আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মাহমুদুল হাসান ফেসবুকে সাজিদ হাসান নামের এক ব্যক্তির একটি পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘আজ মুরতাদ কাফির বেগম রোকেয়ার জন্মদিন।’ মুহূর্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

রাকসুর সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রার্থী মামুনুজ্জামান স্নিগ্ধ পোস্টটির স্ক্রিনশট শেয়ার করে লিখেছেন,
“নারী শিক্ষার অগ্রদূত রোকেয়াকে কাফের-মুরতাদ বলা হয়েছে। ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, নারী নিপীড়ন ও বৈষম্যের অনেক কিছুতেই ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। রোকেয়া এসব কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লিখতেন— তাই আজও তিনি অনেকের কাছে ‘ভয়ঙ্কর’ মনে হয়।”

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাদিকুর রহমান খান মন্তব্য করেন,
“এক শতাব্দী আগে মারা যাওয়া একজন নারীবাদী লেখিকাকে আজও গালাগাল করতে হয়! এর মানে রোকেয়ার চিন্তা-চেতনা এখনও এদের মনে আঘাত করে— এটিই প্রমাণ করে তিনি কতটা সফল ছিলেন।”

রাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরমা পারমিতা বলেন,
“বেগম রোকেয়া উপমহাদেশের নারীশিক্ষা ও প্রগতিশীল চিন্তার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না; কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন। একজন শিক্ষক হয়ে তাকে ধর্মীয় গালি দেওয়া শুধু অসম্মানজনক নয়, অন্যায়ও বটে।”

রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এসএম আতিক বলেন,
“৫ আগস্ট আমাদের বাকস্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এর সুবাদে এখন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকরাও ফতোয়া দিতে পারেন।”

রাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা মন্তব্য করেন,
“সবারই নিজস্ব দর্শন থাকে, তার মাপকাঠিও আলাদা। তবে এ ধরনের মন্তব্য প্রকাশ্যে না বলাই উত্তম।”

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন,
“বেগম রোকেয়া পুরো উপমহাদেশেই নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে স্বীকৃত। তাকে নিয়ে এমন মন্তব্য করা মানে পুরো নারী সমাজকেই অপমান করা। এ বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

কালবেলার পক্ষ থেকে খন্দকার মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রোকেয়া তার দৃষ্টিতে ‘ইসলামবিদ্বেষী’।
তার ভাষ্য— “এই লেখাগুলো ভেরিফাই করার জন্য বড় আলেমদের কাছে যেতে হবে। আলেমরাই বলতে পারবেন তিনি কাফের ছিলেন কি না।”
তবে রোকেয়ার অন্যান্য লেখাপত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, কেবল একটি উপন্যাস তিনি পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাজিদ হাসানের যেই পোস্টটি শিক্ষক শেয়ার করেছেন, সেখানে রোকেয়ার রচনাবলীর ইসলাম-সম্পর্কিত অংশগুলো খণ্ডিতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল এবং সেই ব্যাখ্যাই অনুসরণ করে শিক্ষক মন্তব্য দিয়েছেন।

রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন,
“এটা তার (শিক্ষকের) ব্যক্তিগত মত। অনেকের কাছে এটি অগ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এ ধরনের মন্তব্য সমর্থন করি না।”

অন্যদিকে শিক্ষাঙ্গনের অনেকেই মনে করছেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধ, যুক্তিবাদী চর্চা ও নিরাপদ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর