[email protected] সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

নতুন মাত্রায় বুটেক্সের ওয়েট প্রসেস ল্যাবরেটরি

বুটেক্স প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:০৯ পিএম

বুটেক্স ল্যাব

টেক্সটাইল শিল্পায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ওয়েট প্রসেস। এই প্রক্রিয়ায় প্রি-ট্রিটমেন্ট, ডায়িং-প্রিন্টিং ও ওয়াশিংয়ের মাধ্যমে রূপান্তরিত কাপড়ের মান, সৌন্দর্য ও বাজারমূল্য বহুগুণে বাড়ে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শিক্ষার্থীদের শিল্পমানের এই প্রক্রিয়া বাস্তবভাবে শিখতে সহযোগিতা করছে তাঁদের অত্যাধুনিক ওয়েট প্রসেস ল্যাবরেটরি।


প্রায় ৭০ বছর পূর্বে তৈরি এই ল্যাবটিতে পুরোনো যন্ত্রপাতি, ব্যবহারিক ক্লাসে ভিড় ও অবকাঠামোগত নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করা কষ্টসাধ্য ছিল। চলতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের তত্ত্বাবধানে পুরাতন ও অকার্যকর যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করে আধুনিক মানসম্পন্ন নতুন মেশিন স্থাপন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে ল্যাবরেটরির সংস্কার করা হয়। ল্যাবটিতে ব্যবহারিক কার্যক্রমের জন্য এটিকে প্রি-ট্রিটমেন্ট, ডায়িং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং ও টেস্টিং— এই পাঁচটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। ফলে এখন প্রি-ট্রিটমেন্ট থেকে শুরু করে ডায়িং, ওয়াশিং, কিউরিং ও ফিনিশিং পর্যন্ত পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে এই সংস্কারকৃত ল্যাবটিতে। এতে শিক্ষার্থীদের গবেষণা, উদ্ভাবন ও পেশাগত দক্ষতার উপর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারবে।


নতুনভাবে স্থাপিত যন্ত্রপাতি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী রঞ্জন, ছাপার ও সমাপ্তি প্রক্রিয়ায় উন্নত মানের পরীক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রিন্টিং বিভাগে নতুন সংযোজিত মেশিনগুলোর মধ্যে রয়েছে অটোমেটিক ল্যাব প্রিন্টিং টেবিল, স্ক্রিন স্ট্রেচিং মেশিন, অটোমেটিক ইউভি এক্সপোজার মেশিন, স্ক্রিন ফ্রেম ড্রায়িং মেশিন, ওয়াটার পিউরিফিকেশন ইউনিট (গ্রেড-৩) ও ডিজিটাল টেক্সটাইল প্রিন্টিং মেশিন। এই উন্নত মেশিনগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্ক্রিন ও ডিজিটাল প্রিন্টিং উভয় প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন এবং ট্র্যাডিশনাল ও হাই-টেক প্রিন্টিং টেকনিক নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা করতে পারবে। এছাড়া রঙের স্থায়িত্ব, ওয়াশ ফাস্টনেস ও প্রিন্টিং প্রিসিশন সংক্রান্ত পরীক্ষায় আন্তর্জাতিক মানের ফলাফল পাওয়া যাবে।

 

এছাড়া ডায়িং ও টেস্টিং বিভাগে সংযোজিত মেশিনগুলো হলো গ্লিসারিন বাথ স্যাম্পল ডায়িং মেশিন, ল্যাবরেটরি প্যাডার মেশিন, ভার্টিক্যাল ফ্ল্যামাবিলিটি টেস্টার, প্রিসিশন অক্সিজেন টেস্টার, ফ্যাব্রিক স্টিফনেস টেস্টার, হাইড্রোলিক জিএসএম কাটার, গ্রে স্কেল ও ব্লু স্কেল ইত্যাদি। মেশিনগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের ডায়িং ও প্রিন্টিং প্রক্রিয়ার গুণগত মূল্যায়নের সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা।


অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে ল্যাবের অভ্যন্তরীণ স্থান পুনর্গঠন, নতুন বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযোজন এবং পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। ল্যাবে নিরাপদ ও টেকসই কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার জন্য আধুনিক বায়ু চলাচল ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।


এই ল্যাবের সুবিধা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকার কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক তন্তুর উপযোগী রঙায়ন শর্ত নির্ধারণ ও সর্বোত্তম ফল পাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি কম পানি ব্যবহার, নিম্ন তাপমাত্রায় কার্যকর ডায়িং এবং বায়ো-বেসড ফিনিশিং কেমিক্যাল নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। ল্যাবে ওয়াশিং ইউনিট ও মিনি-ড্রেনেজ সিস্টেম থাকায় বর্জ্যপানি শোধন ও পানি পুনঃব্যবহার সম্পর্কিত গবেষণাও করা সম্ভব।

 

৪৯তম ব্যাচের অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম সিফাত বলেন, আমাদের শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ল্যাবরেটরি, যেখানে আমরা বইয়ের তত্ত্বকে বাস্তবে প্রয়োগ করি।
বর্তমানে ওয়েট প্রসেস ল্যাবের ক্লাসগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যার ফলে আমরা ক্লাস করে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। নতুন ল্যাবে বিভিন্ন নতুন মেশিন আনা হয়েছে যা আমাদের জন্য উপকারী হবে। তবে ল্যাবে যেহেতু ডাইস নিয়ে কাজ করা হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিয়ে আরেকটু সচেতন হওয়া উচিত।

 

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ মামুন কবির জানান, দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে অবশেষে এর আধুনিকায়ন সম্পন্ন হয়েছে। পরিবর্তন ও অগ্রগতির সূচনায় এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মাইলফলক। আমি মনে করি, এই ধরনের আধুনিকীকরণ শুধু শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক দক্ষতা ও গবেষণার সুযোগ বাড়ায় না, বরং তাদের শিক্ষা ও পেশাগত আত্মবিশ্বাসও শক্তিশালী করে। তারা এখন আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতিতে হাতে-কলমে কাজ করতে পারবে এবং ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হবে।


ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সোহাগ বাবু বলেন, পূর্বে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ব্যবহারিক মৌলিক কাজ শেখানো ছিল বেশ কঠিন আর গবেষণার মতো জটিল কার্যক্রম পরিচালনা ছিল প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে সংস্কারকৃত ল্যাবের নতুন কাঠামোটি আধুনিক ডিজাইনে তৈরি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই সুশৃঙ্খল বিন্যাস, আলো–বাতাসের সমন্বয় এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে স্বাভাবিকভাবেই শেখার প্রতি আগ্রহ অনুভব করে। ল্যাব স্কেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রিট্রিটমেন্ট মেশিন সংযোগের ফলে শিক্ষার্থীরা ল্যাবেই সরাসরি শিল্পমানের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারছে। পাশাপাশি আধুনিক ডায়িং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং ও টেস্টিং কাঠামোর কারণে এখন নির্ভুল প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, পুনরুৎপাদনযোগ্য ফলাফল এবং উন্নতমানের পরীক্ষা— সবই করা সম্ভব।


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, ল্যাবের এই সংস্কারের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখন বাস্তব শিল্প-প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশিক্ষণ নিতে পারছে, যা তাদের দক্ষতা উন্নয়নের বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি শিক্ষক ও গবেষকগণ উন্নত মানের পরীক্ষণ ও উদ্ভাবনী গবেষণা পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে বাজেট পাওয়া সাপেক্ষে অন্যান্য বিভাগের ল্যাবসমূহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর