ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার ১২ দিন পর অবশেষে রোববার (৪ আগস্ট) খুলছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
গত ২১ জুলাই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এর আগে ২৭ জুলাই পুনরায় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, শোক এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক পুনর্বাসনের জন্য ছুটি আরও বাড়ানো হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন নিয়মিত ক্লাস বা পরীক্ষা হবে না। বরং নিহতদের স্মরণে একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক পুনর্বাসনের প্রথম ধাপ শুরু হবে।
মাইলস্টোন কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল জানান, রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্মরণসভা চলবে। এতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হবে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কলেজ কর্মী ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বিবেচনায় আরও কিছু সহায়তামূলক কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষ কাউন্সেলিং সেশন, মানসিক পুনর্বাসন কর্মসূচি এবং ব্যক্তিগত সহায়তা পরিষেবা।
শনিবার উত্তরার দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে আয়োজিত শোক ও দোয়া অনুষ্ঠানে আবেগঘন এক মুহূর্তে কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর খান জানান, "সেদিন শিক্ষক নিয়োগের ভাইভায় না গেলে, আমিও হয়তো আর বেঁচে থাকতাম না।"
তিনি বলেন, "আমি সাধারণত ছুটির সময় বাইরে যাই না। কিন্তু সেদিন প্রধান শিক্ষিকার ডাকে সাক্ষাৎকার বোর্ডে যাওয়ার জন্য ঠিক ১টা ৪ মিনিটে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে যাই। মাত্র ৭-৮ মিনিট পরেই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।"
অধ্যক্ষ নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং বলেন, "ঘটনাটি যদি কয়েক মিনিট আগেও ঘটত, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও ভয়াবহ হতে পারত।" তিনি উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের প্রশংসা করেন এবং কোনো ত্রুটি থাকলে তার দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন।
অনুষ্ঠানে নিহত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জারিফ হাসানের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, "সেদিন জারিফ স্কুলে যেতে চাইছিল না, কিন্তু আমরা জোর করে পাঠাই। সে ছিল খুব প্রাণবন্ত ও বন্ধুবৎসল।"
নিহত সহকারী শিক্ষক মাসুকা বেগমের আত্মত্যাগও অনেকের হৃদয় স্পর্শ করে। তার দুলাভাই খলিলুর রহমান জানান, “তিনি চাইলে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু শিক্ষার্থীদের একা রেখে যাননি। তাঁর শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়।”
সহকর্মীরা জানায়, মাসুকা বেগম ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষিকা, যিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার। কলেজের ইংরেজি শিক্ষক নুসরাত আলম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পাঠদান কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার বিবেচনায়
এসআর
মন্তব্য করুন: