[email protected] সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আজকের দিনে শত্রুমুক্ত হয় কক্সবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ৮:৪৮ এএম

১২ ডিসেম্বর কক্সবাজারের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন—

এই দিনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীকে পরাজিত করে কক্সবাজারকে আনুষ্ঠানিকভাবে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।
পঞ্চান্ন বছর আগে এই সকালে শহরের বর্তমান শহীদ দৌলত ময়দান—তৎকালীন পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে—জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মুক্ত শহরের ঘোষণা দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি যানবাহনে সমন্বিত বহরটি সেদিন শহরে প্রবেশ করে।

কক্সবাজার–বান্দরবান অঞ্চলের তৎকালীন কমান্ডার ক্যাপ্টেন আবদুস ছোবহানের নেতৃত্বে যোদ্ধারা সকাল ১০টার দিকে পতাকা উত্তোলন ও শোডাউনের মাধ্যমে স্বাধীনতার বার্তা ছড়িয়ে দেন।

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রকাশিত “মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার-বান্দরবান” গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, ১২ ডিসেম্বর খুব ভোরে উখিয়ার পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্প থেকে চারটি বাস, একটি রেডক্রসের সাদা জিপ এবং স্থানীয়দের সহায়তায় গঠিত একটি মিশ্র বহর কোটবাজার-মরিচ্যা হয়ে কক্সবাজারের দিকে যাত্রা শুরু করে।

মরিচ্যা হাটে সেদিন ছিল সাপ্তাহিক বাজার। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ হাত তুলে স্লোগানে স্লোগানে মুক্তিযোদ্ধাদের বরণ করে নেয়। হানাদার হামলার আশঙ্কায় অস্ত্র প্রস্তুত রেখে যোদ্ধারা শহরের দিকে অগ্রসর হন। শহরের প্রবেশমুখে পৌঁছে তারা চার দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে কক্সবাজার ঘিরে ফেলে—হাশেমিয়া মাদ্রাসা থেকে রাডার স্টেশন, কলাতলী থেকে সৈকত পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেয় মুক্তিবাহিনী।

সমাবেশস্থলে মানুষের ঢল নামে। স্বাধীনতার আনন্দ আর হারানো আপনজনদের কান্নায় পুরো মাঠ সেদিন পরিণত হয়েছিল আবেগে ভরা জনসমুদ্রে।

সেদিনের বক্তব্যে ক্যাপ্টেন ছোবহান সবাইকে শহীদদের জন্য শোকের বদলে গর্ববোধ করতে বলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে শহীদ ছাত্রনেতা সুভাষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরহাদ, অ্যাডভোকেট জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরীসহ অসংখ্য নিপীড়িত মানুষের আত্মত্যাগেই কক্সবাজারের মুক্তি সম্ভব হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, কক্সবাজারের বিভিন্ন বধ্যভূমি এখনো সংস্কারের অভাবে অবহেলিত। এতে নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ হারাচ্ছে।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ. এম. নজরুল ইসলাম বলেন, বিজয়ের এত বছর পরেও শহরের মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর এলে কক্সবাজারের মানুষ গর্বভরে স্মরণ করে সেই দিনকে—যেদিন বাংলার বীর সন্তানেরা উপকূলীয় এই শহরটিকে পাকবাহিনীর দখলমুক্ত করেছিলেন।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর