[email protected] বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার গতিপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১১:৩৭ এএম

জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে

মামলা বহুদিন ধরেই আলোচনায়, তা এখন শেষ ধাপের দিকে। দীর্ঘ তদন্ত, অসংখ্য সাক্ষ্য–প্রমাণ এবং টানা যুক্তিতর্কের পর আজ রায় ঘোষণার মাধ্যমে প্রায় শেষ হতে চলেছে বিচারপ্রক্রিয়া। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন বিচার—যা বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারে।

ক্ষমতা ছাড়ার পর মামলা

২০২৪ সালের আন্দোলনের চাপে ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সময়ে ভারত গিয়ে আশ্রয় নেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাদের আমলে গুম, খুন, দুর্নীতি ও গণহত্যাসহ নানা অভিযোগ ওঠে, যার বেশকিছু মামলার সূত্রধর হয়ে ওঠেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হন এবং পরে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে রাজসাক্ষী হন।

মামলা, তদন্ত ও চার্জশিট

আইসিটি বিডির মামলা নং ২/২০২৫–এ এই তিনজনকে আসামি করা হয়।

তদন্ত শুরু: ১৪ আগস্ট ২০২৪

মিস কেস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত: ১৬ অক্টোবর

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: ১৬–১৭ অক্টোবর

গ্রেপ্তার: চৌধুরী মামুন (১৬ মার্চ ২০২৫)


পরবর্তীতে তদন্তসংস্থা তাদের প্রতিবেদন জমা দেয় ১২ মে। ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে।

দালিলিক সাক্ষ্য–প্রমাণ

প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে যে বিশাল পরিমাণ প্রমাণ জমা দেয়, তার মধ্যে ছিল—

প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার নথি

১৪ খণ্ড দালিলিক নথিপত্র

৯৩টি প্রামাণ্য প্রদর্শনী

৩২টি বস্তুগত প্রমাণ—বুলেট, রক্তমাখা পোশাক, ভিডিও–অডিও, বই ইত্যাদি

৮৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, যার মধ্যে ৫৪ জন সরাসরি সাক্ষ্য দিয়েছেন


বিচার কার্যক্রম

১৭ জুন: পলাতক আসামিদের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি

২৪ জুন: স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ

১ জুলাই: অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি শুরু

১০ জুলাই: অভিযোগ গঠন, বিচার শুরু; চৌধুরী মামুন দোষ স্বীকার

৩ আগস্ট: প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য

৮ অক্টোবর: সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

১২–২৩ অক্টোবর: যুক্তিতর্ক ও পাল্টা যুক্তি

১৩ নভেম্বর: রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ


শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রসিকিউশন মোট ৫টি অভিযোগ আনে, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো:

১. উসকানি:

১৪ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্র–জনতাকে ‘রাজাকার’ বলা

ডু’ভিসিকে ফোন করে অভিযানের নির্দেশ

সাবেক মেয়র তাপসকে হেলিকপ্টারসহ মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ

 

২. গণহত্যা:
এসব নির্দেশনার পর সারা দেশে নিহত হন প্রায় ১৪০০ জন, আহত কয়েক হাজার।


৩. আবু সাঈদ হত্যা (বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়)


৪. চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যা


৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলা

 

প্রসিকিউশনের দাবি—সব অভিযোগ প্রমাণিত, এবং তারা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছে।

রায়ের অপেক্ষা

সব প্রক্রিয়া শেষে আজ এই বহুল আলোচিত মামলার রায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে এবং বহু ভুক্তভোগী পরিবারের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর