বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে।” তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, দলের একক প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে দলের এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, শিগগিরই বিএনপির একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে, এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম জানানো হবে।
ঐক্যের বার্তা ও নির্বাচনী প্রস্তুতি
তারেক রহমান বলেন, “দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকে জয়ী করার দায়িত্ব আমাদের সবার। ধানের শীষ জিতলে দেশ ও গণতন্ত্র জিতবে।” তিনি দলীয় কর্মীদের আহ্বান জানান, মনোনয়নপ্রাপ্ত না হলেও দলের স্বার্থে ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “আপনাদের মধ্যে যদি বিবাদ, রেষারেষি বা বিভাজন তৈরি হয়, তাহলে প্রতিপক্ষ সেই সুযোগ নিতে পারে। তাই এখনই ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রবাসী সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য গ্রহণের অংশ হিসেবে দলের অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন করা হয়। লন্ডন থেকে সংযুক্ত হয়ে তারেক রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে গেটওয়ের উদ্বোধন করেন।
প্রার্থী মনোনয়ন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
তিনি জানান, বিএনপি ইতোমধ্যে তিনশ সংসদীয় আসনে দলীয় ও সমর্থিত প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। অনেক আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন—যা দলের শক্তি ও জনসমর্থনের প্রতিফলন।
তবে তিনি বলেন, “প্রত্যেক যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু আসনে আমাদের রাজপথের শরিকদেরও প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেওয়া হবে। এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।”
তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উক্তি স্মরণ করিয়ে বলেন, “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।”
নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে বক্তব্য
তারেক রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করবে। বিএনপি ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, অতীতে “পরাজিত স্বৈরাচার” দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল, আর এখনো বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল চালানো হচ্ছে। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস প্রকাশ করেন, “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে পরাজিত করতে পারবে না।”
প্রবাসী ভোট ও নারী নিরাপত্তা প্রসঙ্গে
প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রবাসীদের ভোট প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা হবে।”
নারী নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশে নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনৈতিক দল—সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি নারী নির্যাতন ও হত্যার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, “এটি সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না।”
সভার অন্যান্য বক্তারা
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঞ্চালনা করেন নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, হুমায়ুন কবির এবং মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল।
তারেক রহমানের ভাষায়, “এখন সময় ঐক্যের, সময় দায়িত্ব পালনের। আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, স্বাধীনতার চেতনা রক্ষা এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা।”
এসআর
মন্তব্য করুন: