আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ১৮ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টি জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াত কর্তৃক প্রস্তাবিত ১৮ দফা সুপারিশ — সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত রূপে:
১. আগস্ট/জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি হলে, পরের নভেম্বরে গণভোট অনুষ্ঠিত করার প্রস্তাব।
২. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধিত বিধান মেনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব দলীয় প্রতীকই ব্যবহার করবে; অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ রাখা হোক।
৩. নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার, আনসার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
৫. প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্য তৎপর রাখতে হবে।
৬. প্রতিটি নির্বাচনী বুথে সিসি ক্যামেরা স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।
৭. পূর্বে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োগ থেকে বিরত রাখা এবং মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক (ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি) নিয়োগ শতভাগ লটারি পদ্ধতিতে করতে হবে।
৮. রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে নিয়োগ দিতে হবে।
৯. নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে থেকে সব ভোটকেন্দ্রে সামরিক, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের কড়াকড়ি অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
১০. নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে মাঠ সমতল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১১. সারাদেশে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে, অতীতে দলীয় প্রয়োজনে দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে তা সরকারের কাছে জমা করাতে হবে।
১২. নির্বাচনী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাস বা আতঙ্ক সৃষ্টি করলে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
১৩. ভোটারদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে নির্বাচনী এলাকা ও এর আশপাশে কোনও সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখা দিলে তা তাৎক্ষণিকভাবে দমন করতে হবে।
১৪. ভোটার তালিকায় যাদের ছবির মান কম বা অস্পষ্ট, তাদের চিত্র সংশোধন করে পোলিং এজেন্টদের হাতে যথাসময়ে প্রেরণ করতে হবে।
১৫. নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত পোলিং, প্রিজাইডিং অফিসার, আনসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৬. প্রবাসী ভোটারদের ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া সহজীকরণ করতে ভোটার আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট যেকোনো একটিকে বৈধ হিসেবে গ্রহণ করা হোক; রেজিস্টার্ড প্রবাসী ভোটারদের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সময়ে দেওয়া হবে।
১৭. নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও নিরপেক্ষতা যাচাই করা হোক।
১৮. অতীতে যে কোনো যৌক্তিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো পুনঃবিবেচনা করা হোক।
জামায়াত সূত্র বলেছে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে আগামী নির্বাচন আরও বিশ্বাসযোগ্য ও নিরাপদ হবে। ইসি-র পক্ষ থেকে সভায় অগ্রগতি ও প্রস্তাবগুলোর প্রয়োজনে পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা চলমান থাকবে বলে জানানো হয়।
এসআর
মন্তব্য করুন: