নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পাঠানো চিঠির ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলটি জানিয়েছে, ইসির চিঠি বিধি-বহির্ভূত ও স্বেচ্ছাচারী আচরণের উদাহরণ।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২২ জুন ২০২৫ তারিখে এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের আবেদন জানায়। আবেদন জমা দেওয়ার আগে ও পরে এনসিপির প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে দলটি তাদের অনড় অবস্থান—‘শাপলা’ প্রতীক পাওয়ার দাবি—বারবার তুলে ধরে।
নাসীরুদ্দীন আরও জানান, এনসিপি ৩ আগস্ট, ২৪ সেপ্টেম্বর ও ৭ অক্টোবর—এই তিন দফায় নির্বাচন কমিশনে পৃথক আবেদন জমা দেয়, যেখানে শাপলা প্রতীকের তিনটি ভিন্ন সংস্করণ—‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ ও ‘লাল শাপলা’—প্রস্তাব করা হয়। দলটি এসব প্রতীকের দৃশ্যমান নমুনাও ইসির কাছে উপস্থাপন করেছে।
কিন্তু এসব আবেদন নিষ্পত্তির আগেই নির্বাচন কমিশন ১৩ অক্টোবর তারিখে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে এনসিপির প্রার্থিত প্রতীকের বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এনসিপির মতে, এটি “অনাকাঙ্ক্ষিত, স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনি” পদক্ষেপ।
১. প্রতীক অন্তর্ভুক্তি ও বাদ দেওয়ার মানদণ্ড প্রকাশের দাবি
এনসিপির দাবি, নির্বাচন কমিশন এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত নীতিমালা, নির্দেশিকা বা মানদণ্ড প্রকাশ করেনি, যার ভিত্তিতে প্রতীক তালিকায় প্রতীক অন্তর্ভুক্ত বা বাদ দেওয়া হয়।
সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সকল নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতি সমান ও ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। তাই ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ ও ‘লাল শাপলা’ প্রতীকগুলো তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন আইনি ভিত্তি বা নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে, তা লিখিতভাবে জানাতে ইসিকে অনুরোধ করেছে দলটি।
২. রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এর অনুসরণ বাধ্যতামূলক
এনসিপি মনে করে, দলটির নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে যেতে হলে ইসিকে ২০০৮ সালের ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা’র বিধি ৭(২) অনুযায়ী ফরম-২ অনুসরণ করে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।
এই ফরম অনুযায়ী, দলটির প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। কমিশনের একতরফাভাবে অন্য প্রতীক বরাদ্দের কোনো আইনি সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি।
এনসিপির দাবিসমূহ
ক) নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেবে—
প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের নীতিমালা বা মানদণ্ড কী এবং কোন আইনি ভিত্তিতে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
খ) যদি এ ধরনের মানদণ্ড এখনো প্রণীত না হয়ে থাকে, তবে তা অবিলম্বে তৈরি ও প্রকাশ করতে হবে এবং সব রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য করতে হবে।
গ) নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের বিধিমালার ফরম-২ অনুসারে এনসিপির প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।
ঘ) কমিশন প্রতীক বরাদ্দে যুক্তিসঙ্গত, স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তার সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করবে।
পোস্টে শেষে বলা হয়েছে,
“গণমানুষের সঙ্গে শাপলা প্রতীককেন্দ্রিক এনসিপির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দেশের মানুষের এই ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার কোনো ক্ষমতা কারো নেই। তাই শাপলা ব্যতীত অন্য কোনো প্রতীক গ্রহণ এনসিপির জন্য সম্ভব নয়।”
এসআর
মন্তব্য করুন: