ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার’ উল্লেখ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে দুর্গাপূজার উৎসব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, দল-মত-নির্বিশেষে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।’
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুর্গাপূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। এতে সারা দেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আপনার-আমার, আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে, এটাই বিএনপির নীতি, এটাই বিএনপির রাজনীতি।
তিনি বলেন, ‘আগামী মাসেই আপনাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই উৎসব উপলক্ষে আমি আপনাদের আগাম শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিরাপদে পূজা উদযাপন করুন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার।
ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বিশ্বাসী বলুন আর অবিশ্বাসী বলুন কিংবা সংস্কারবাদী প্রত্যেকটি নাগরিক রাষ্ট্র বা সমাজে যার যার ধর্মীয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক অধিকারগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে বিনা বাধায় উপভোগ করবে, এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের এমন কোনো জিজ্ঞাসা ছিল না।
আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এসব নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র পরিচয় আমরা বাংলাদেশি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে যা হয়েছে আপনারা তা দেখেছেন।
সারা দেশে আইনের শাসন ছিল না বলেই প্রধান বিচারপতি হয়েও এস কে সিনহাকে অবিচারের শিকার হতে হয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচারের আমলে আদালত আর আয়নাঘর একাকার হয়ে গিয়েছিল।
সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু দল-মত, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি নিজ নিজ অধিকার রক্ষায় প্রত্যেকটি নাগরিকের ভোটের অধিকার একটি কার্যকরী শক্তিশালী অস্ত্র।
যত দিন পর্যন্ত মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, অর্থাৎ দল-মত, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিজের ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারবেন, তত দিন পর্যন্ত কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষিত নয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে সবাইকে নিয়ে রাজনীতি। একটা অবিশ্বাস্য বিপ্লব ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করে একটা ভয়াবহ দানবকে হঠাতে হয়েছে এবং আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এই বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দুঃখজনকভাবে আপনাদেরকে এর ভেতরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় এসব ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। ইন্ডিয়ার জার্নালিস্ট এসেছিল দলে দলে, সবাইকে একটা কথা আমরা বলেছি যে, এই পরিবর্তনের ফলে যেটুকু ঘটেছে সেটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক, সেটা কোনো সাম্প্রদায়িক নয়। আজকে আবার একই চক্রান্ত শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। দেখুন, এগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেখবেন না। আজকে সেখানে একইভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। আসুন, আমরা ভবিষ্যতে যেন একটি রেইনবো নেশন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে পারি তারেক রহমানের নেতৃত্বে সেই পথে আমরা এগিয়ে যাই।
বিএনপির ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তপন দের যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, ফেনীর কামাক্ষা চন্দ, খাগড়াছড়ির অজয় সেনগুপ্ত, সাভারের উত্তম ঘোষ, খুলনার সুজনা জলি, বরিশালের সঞ্জয় গুপ্ত, অবসরপ্রাপ্ত টিভি প্রযোজক মনোজ সেন গুপ্ত, গৌড় সিনহা প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন।
ইসকনের চারু চন্দ্র্র দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গোস্বামী, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, গুলশান পূজা কমিটির জে এল ভৌমিক, পান্না লাল দত্ত, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নির্মল রোজারিও প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্তু কুমার কুন্ডু, আবদুল বারী ড্যানি, অর্পণা রায়, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, সুশীল বড়ুয়া, জন গোমেজ, মিল্টন বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: