আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির জয়ের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বিএনপি এখন এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থানে রয়েছে।
দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন। ইংরেজিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আমার বাংলাদেশে ফেরার সময় খুব কাছেই। আমরা নিশ্চিতভাবে জিতব এবং এককভাবে সরকার গঠনের সক্ষমতা রাখি।”
তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন পরিবর্তনের মোড় ঘুরিয়েছে। “শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটাতে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনই ভূমিকা রেখেছে। একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে এই পরিবর্তন সম্পূর্ণ হবে না,”—যোগ করেন তিনি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস–এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী সরকার যেই গঠন করুক না কেন, তাদেরকে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, রপ্তানি খাতের সংকট ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপে বিএনপি এগিয়ে আছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছেন।
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত বছর আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলকেও স্বাগত জানাবেন বলে জানান তিনি। “তারা তরুণ, তাদের একটি ভবিষ্যৎ আছে,” বলেন তারেক রহমান।
ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি জানান, তৈরি পোশাক রপ্তানির বাইরেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে চান।
তার পরিকল্পনায় রয়েছে দেশকে আঞ্চলিক ই-কমার্স সরবরাহকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা, যা আমাজন, ইবে ও আলিবাবার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে পারবে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, তিনি ‘সবকিছুর আগে বাংলাদেশ’ নীতিতে বিশ্বাসী।
শেখ হাসিনার আমলে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক একপাক্ষিক ছিল বলে উল্লেখ করে তিনি সম্পর্কের নতুন ভিত্তি গড়ার আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, নতুন বিএনপি সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসবে। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে সাত হাজার সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে কিনা—সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
শেখ হাসিনার দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ কীভাবে পাবেন, সেটাই প্রশ্ন।”
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দুর্নীতি, বিরোধী মত দমন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ ছিল।
তারেক রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচিত হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ পুনরুদ্ধার উদ্যোগ তিনি অব্যাহত রাখবেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: