[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২

কক্সবাজার সফর ছিল নীরব প্রতিবাদ: হাসনাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ আগষ্ট ২০২৫ ৮:৩২ পিএম

সংগৃহীত ছবি

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে বিভাজনমূলক আচরণ এবং আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের যথাযথ সম্মান না জানানোয় সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিনি জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট কক্সবাজারে যাওয়া ছিল একটি অসম্পূর্ণ ঘোষণাপত্রের প্রতি তার নীরব প্রতিবাদ।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক পেজে দলের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব প্রকাশ করেন হাসনাত। তার একদিন আগে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে কক্সবাজার সফর নিয়ে এনসিপির পক্ষ থেকে তাকে ও আরও চার নেতাকে নোটিশ পাঠানো হয়। ওই সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

নোটিশের জবাবে হাসনাত বলেন,

“৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারি, আমাদের আন্দোলনের আহত ও নেতৃত্বদানকারী অনেক সহকর্মীকে অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। যেখানে ঐক্যের বদলে বিভাজনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমার উপস্থিত থাকার প্রয়োজন মনে করিনি।”

তিনি জানান, কক্সবাজার সফরের উদ্দেশ্য ছিল—ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করা, পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে ভাবা। সেই সফরের মাধ্যমে তিনি অসম্পূর্ণ ঘোষণাপত্রের প্রতি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

হাসনাত আরও জানান, ৪ আগস্ট রাতে তিনি প্রথমে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। পরে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ফোন করে জানান, তিনি স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের সফরে যাচ্ছেন। নাসীরুদ্দীন তাকে আশ্বস্ত করেন যে, আহ্বায়ককে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং তিনি এতে সম্মতি দিয়েছেন। সফরে তার সঙ্গে ছিলেন নাসীরুদ্দীন, সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি।

নোটিশের জবাবে হাসনাত দাবি করেন, বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সফরের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কিছু গণমাধ্যমে সরবরাহ করেছে।

“গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের সহযোগিতায় আমাদের সফরকে সন্দেহজনক ও অপরাধপ্রবণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ‘গোপন বৈঠক’ করতে গেছি—যদিও তিনি তখন বাংলাদেশেই ছিলেন না।”

সবচেয়ে দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা হিসেবে হাসনাত উল্লেখ করেন, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার বিরুদ্ধে চালানো ‘স্লাট শেমিং’ বা নারীবিদ্বেষমূলক প্রচারণা। তিনি বলেন,

“এই ন্যক্কারজনক আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল—রাজনীতিতে আগ্রহী নারীদের নিরুৎসাহিত করা। এমন ঘটনার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও, বরং আমাদেরকেই শোকজ করা হয়েছে।”

হাসনাত মনে করেন, শোকজ নোটিশে তার কোনো আইন লঙ্ঘনের উল্লেখ নেই। বরং এটি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উৎসাহিত করার শামিল।

“যেকোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় সংগঠনের গঠনতন্ত্র বা নির্দিষ্ট কোনো আইন লঙ্ঘনের কারণে। আমার ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটেনি।”

তিনি দলের প্রতি নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে লেখেন,

“আমি বিশ্বাস করি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার মাধ্যমেই এনসিপি আরও রাজনৈতিকভাবে পরিণত হবে।”

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর