সারা দেশে গত ১১ মাসে (২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) সংঘটিত ৪৭১টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় মোট ১২১ জন নিহত ও ৫ হাজার ১৮৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সোমবার (৪ আগস্ট) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি জানায়, এসব সহিংসতার মধ্যে ৯২ শতাংশ ঘটনার সঙ্গে বিএনপি, ২২ শতাংশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ৫ শতাংশের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামি এবং ১ শতাংশের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
গবেষক জুলকারনাইন বলেন, “আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে দলে থাকা অপরাধী সদস্যদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারও অনেক সময় এসব কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দিয়েছে।”
তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক নেতারা প্রায়ই ব্যক্তি স্বার্থে ঐক্য গড়ে তোলে, যা গঠনমূলক সংস্কারের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের জন্য একাধিক উদ্যোগ নিলেও অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো ছিল সাময়িক ও অ্যাডহক ভিত্তিক। বাস্তবায়নে কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা বা রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখতে পেয়েছি, নতুন গঠিত রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তী সরকার এবং কিছু রাজনৈতিক নেতা দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাতে জড়িত ছিলেন। তাই বলা যায়, আমরা স্বৈরাচার পতনের পরও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার শিকড় উপড়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়েছি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের সময় সহিংসতায় জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সরকার। গত ১১ মাসে পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৭৬১টি মামলায় ১,১৬৮ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারা দেশে মোট ১,৬০২টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩৮টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় পতিত সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ আনুমানিক ৮৭ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। তদন্তে প্রায় ৭০ শতাংশ মামলায় ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ রয়েছে এবং ৬০-৭০টি হত্যা মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
গত এক বছরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৪২৯টি অভিযোগ পেয়েছে এবং ২৭টি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ২০৬ জন আসামির মধ্যে ৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন সংশোধনের আগেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিচারকাজে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িতদের বিচার চলমান রয়েছে।
প্রতিবেদনের সার্বিক মূল্যায়নে বলা হয়, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি স্পষ্ট। খুন, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ, লুটপাট, ছিনতাই ও আন্দোলনের নামে অরাজকতা বেড়েছে। গণপিটুনি বা মব জাস্টিসে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
এছাড়া রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধির সময় ঢালাওভাবে মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার বাণিজ্য, বিচারবহির্ভূত হত্যা, এবং হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। পুলিশি কার্যক্রমে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে—কোনো পক্ষের প্রতি নমনীয়তা, অন্য পক্ষের ওপর অতিরিক্ত দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এসআর
মন্তব্য করুন: