[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
৫ আষাঢ় ১৪৩২

ইউনূস-তারেক ঐকমত্যে আশার বার্তা, তবে চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২৫ ৫:৫৪ পিএম

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতায় থাকা বিএনপিতে এখন কিছুটা স্বস্তির আবহ।

লন্ডনে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যকার বৈঠক ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে রাজনীতিতে। ঐ বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব অনেকটাই কমেছে, বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ইতিবাচক অগ্রগতির পথচলায় এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের আন্দোলন, সরকারি কর্মচারীদের অসন্তোষ এবং এনবিআর অধ্যাদেশ নিয়ে চলমান বিতর্ক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।

বিশ্লেষকদের মতে, লন্ডন বৈঠকের অর্জনকে স্থায়ী ও ফলপ্রসূ করতে হলে এসব অবশিষ্ট সংকট নিরসন জরুরি। তা না হলে বিরোধী শক্তিগুলো সুযোগ নিয়ে উত্তেজনা উসকে দিতে পারে, যা রাজনৈতিক অগ্রগতির গতি কমিয়ে দিতে পারে।

সমঝোতা ও নির্বাচন: বাস্তবতার মুখোমুখি

লন্ডন বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। তারেক রহমান প্রস্তাব করেন, ২০২৬ সালের রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজন হোক। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জানান, এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে।

তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও পুরোপুরি স্পষ্টতা আসেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, “লন্ডন বৈঠকের ফলে আপাত স্বস্তি এলেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে জামায়াত ও এনসিপি ঐক্যমতে নেই বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “আগামী দুই মাসের মধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেদিকে এগোবে, তা নির্ধারণ করবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আদৌ সম্ভব কি না।”

বিচার ও সংস্কার নিয়ে শ্লথ গতি

নির্বাচনের আগে বিচার ও রাজনৈতিক সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী মনে করেন, এ প্রক্রিয়ায় গতি নেই।

তিনি বলেন, “বিচারের গতি অত্যন্ত মন্থর। শুধু ঘোষণায় চলবে না, বাস্তবায়নে সরকারকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। নয়তো নির্বাচন ঝুলে যেতে পারে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “গুম-নির্যাতনের মতো ইস্যুতে এখন কমিশন গঠনের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু অতীতে এ বিষয়ে কার্যকর কিছু হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে দায়বদ্ধতা না থাকলে এসব প্রতিশ্রুতি বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।”

রাজনৈতিক ঐকমত্যই মূল চাবিকাঠি

আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, “নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য বিচার বা সংস্কারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, আর তার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন।”

তিনি মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে বড় কোনো বাধা নেই, যদি অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাতে সম্মত থাকে।

নতুন রাজনৈতিক বার্তা: সমঝোতার রাজনীতি

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক আশরাফ কায়সার লন্ডন বৈঠককে একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “প্রথমবারের মতো একটি সরকার ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনায় বসেছে। এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল।”

তিনি মনে করেন, “যদিও জামায়াত বা এনসিপির মতো কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করছে, তবু গণতন্ত্রে এটাই স্বাভাবিক। বৃহৎ চিত্রে এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।”

উপসংহার: সম্ভাবনার জানালা, সতর্কতার আবশ্যকতা

সার্বিকভাবে, লন্ডন বৈঠক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলেছে। তবে এই পথচলায় অবশিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা না করলে অগ্রগতি থমকে যেতে পারে। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা, সংলাপের রাজনীতি এবং জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে ত্যাগের মনোভাব থাকলেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ সুগম হবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর