[email protected] শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
২৮ চৈত্র ১৪৩১

নির্বাচনের মাধ্যমে অস্থিরতা দূর করুন: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ৭:৩২ পিএম

ফাইল  ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশ এক গভীর অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে এই অস্থিরতা দূর করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়, যাতে দেশ আবারও অস্থির হয়ে ওঠে।”

বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার লাকসাম স্টেডিয়ামে বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। লাকসাম উপজেলা, পৌরসভা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম। জনসভার শুরুতে ৩১টি কবুতর উড়িয়ে বিএনপির সংস্কার কর্মসূচিকে স্বাগত জানানো হয়।

দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান

মির্জা ফখরুল বলেন, “সংস্কারের কথা বলে অনেকেই নির্বাচন পেছানোর কথা বলছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ সংস্কার কতটা বোঝে? তারা চায় দুইবেলা ভাত, মাথা গোঁজার ঠাঁই, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং শান্তি। জনগণের কাছে এসব মৌলিক চাহিদাই প্রকৃত সংস্কার।”

তিনি আরও বলেন, “দেশকে আর অস্থিতিশীল করবেন না, নৈরাজ্য সৃষ্টি করবেন না। আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছি। কিন্তু কিছু লোক বিদেশে বসে সংগ্রামের কৃতিত্ব নিতে চাইছে, যা সত্য নয়। সংগ্রাম হয়েছে রাজপথে, জনগণের রক্তের বিনিময়ে।”

সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে মন্তব্য

বিএনপি মহাসচিব সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “জুলাই বিপ্লবে জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক, কারণ এটি ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একটি ফ্যাসিবাদী সরকার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। জনগণের আন্দোলনের ফলে সেই সরকার বিদায় নিয়েছে এবং নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন এই সরকারকে সহযোগিতা না করলে তারা কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারবে না।”

আওয়ামী লীগকে দায়ী করে কঠোর সমালোচনা

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বলেন, “১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, কিন্তু আওয়ামী লীগ ভালো কিছু উপহার দিতে পারেনি। শেখ হাসিনার শাসনে সংসদ, বিচার বিভাগ, নির্বাচনী ব্যবস্থা, ভোটাধিকার, অর্থনীতি—সব কিছু ধ্বংস হয়েছে। দেশকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে তারেক রহমান ‘টেকব্যাক বাংলাদেশ’ এবং ‘ফয়সালা হবে রাজপথে’ স্লোগান দিয়েছেন। রাজপথেই ফয়সালা হয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়েছে।”

বিএনপি নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নের অভিযোগ

মির্জা ফখরুল বলেন, “লাকসামে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। স্থানীয় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বিএনপির কাউকে এলাকায় ঢুকতে দেননি, তিনিই ছিলেন লাকসামের ত্রাস। কিন্তু আজ তিনি কোথায়?”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সারা দেশে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। জুলাই বিপ্লবেও ২ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও গণতন্ত্রের জননী খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।”

একতা ও সতর্কতার আহ্বান

বিএনপি মহাসচিব দলের নেতাকর্মীদের বিভেদ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কেউ বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। ১৯৭১ আমাদের গর্ব, সেটিকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর কিছু বলা চলবে না। দেশের স্বার্থে আমাদের এক থাকতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “শেখ হাসিনা এখনো দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী, তবে যদি তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, তাহলে জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে না। এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”

জনসভার অন্যান্য বক্তারা

জনসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, প্রবাসীবিষয়ক সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন, কর্মসংস্থান সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মো. মোস্তাক মিয়া, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আসিকুর রহমান ওয়াসিম, কুমিল্লার উত্তরের আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান সরকার, সদস্য সচিব এএফ তারেক মুন্সীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর