[email protected] মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
৯ বৈশাখ ১৪৩২

বাহাত্তরেরসংবিধানেই ফ্যাসিবাদের বীজ: সংস্কার কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ৯:০৪ পিএম

ফাইল ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা হয়। ছয়টি কমিশনের মধ্যে একটি ছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন, যা অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কাজ করেছে।

এই কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছিল, এবং আজ পাঁচটি খণ্ডে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে ক্ষমতাসীনদের অগণতান্ত্রিক প্রবণতা এবং ফ্যাসিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ১৯৭২ সালের সংবিধান ‘দুর্বল’ ছিল। কমিশন তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, "ফ্যাসিবাদের বীজ ৭২ সালের সংবিধানের মধ্যেই নিহিত ছিল।"

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, "বাংলাদেশের পরবর্তীকালের অগণতান্ত্রিক প্রবণতা এবং ফ্যাসিবাদের শুরু ১৯৭২ সালের সংবিধান থেকেই হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ, প্রতিটি সরকারের আমলে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে, আমলাতন্ত্র আরও শক্তিশালী হয়েছে, বিচার বিভাগ দলীয়করণের শিকার হয়েছে, এবং ক্ষমতাসীনদের আর্থিক দুর্নীতি বেড়ে গেছে।"

কমিশন বলছে, "ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা দল, রাষ্ট্র এবং সমাজে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধ্বংস করেছে। ১৯৭২ সালে প্রণীত একক ব্যক্তি ও দল কেন্দ্রিক সংবিধান বাংলাদেশে একাধিকবার স্বৈরাচারী রূপ ধারণ করেছে, যার ফলে অবশেষে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।"

এই প্রতিবেদনে সংসদের মেয়াদ চার বছর নির্ধারণ এবং প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সর্বোচ্চ দুইবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের সাংবিধানিক নাম এবং সংসদীয় কাঠামোতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও রয়েছে।

১৪৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে যে, একজন ব্যক্তি জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন এবং প্রধানমন্ত্রী পদে তার মেয়াদ হবে ৪ বছর। এ সময় তিনি রাজনৈতিক দলের প্রধান বা সংসদ নেতা হতে পারবেন না।

প্রতিবেদনের প্রথম খণ্ডে সংবিধানের পর্যালোচনা, দ্বিতীয় খণ্ডে সুপারিশসমূহ এবং তৃতীয় খণ্ডে সুপারিশের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। চতুর্থ খণ্ডে কার্যাবলী এবং পঞ্চম খণ্ডে রাজনৈতিক দলের পরামর্শের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করে। এসব কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের ১৫ দিন পর, ১৫ জানুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সংস্কার এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়, এবং জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ৫ ফেব্রুয়ারি জমা দেয়া হয়।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর