দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালে নিজেদের রাজনৈতিক ইতিহাসের চরম এক সংকটে পড়ে।
নানা অভিযোগ—গুম, খুন, দুর্নীতি, এবং নেতৃত্বের ভুল ও অহংকারের কারণে জনরোষে বিদ্ধ হয়ে তাদের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
দলের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর থেকে দলীয় কর্মকাণ্ড কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। বন্ধ হয়ে যায় দলের প্রায় সব অফিসিয়াল কার্যক্রম।
২০২৪ সালের এসব সংকট পেছনে ফেলে নতুন বছর ২০২৫-এ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে দলটি।
দলের নেতারা জানান, তারা জনগণের সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করছেন এবং নিজেদের ভুল শুধরে নিয়ে আবারও দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চান।
আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে একটি বার্তায় বলা হয়েছে, "সময় স্বাভাবিক নিয়মেই পরিবর্তিত হয়। নতুন বছরে আমাদের দায়িত্ব হলো সকল বিরূপ পরিস্থিতিকে পেছনে ফেলে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা। বাংলাদেশকে সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তির পথে এগিয়ে নিতে হবে।"
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, "আমরা জনগণের পাশে থাকার জন্য সংকল্পবদ্ধ। দুঃখ-দুর্দশার জন্য দায়ী অনির্বাচিত সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আমাদের সব শক্তি উৎসর্গ করবো।"
তিনি আরও বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের নেতাকর্মীরা চরম নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার। কিন্তু আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী জনগণের সঙ্গে থেকে আবারও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় হবো।"
দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "আওয়ামী লীগের ভুল ও ব্যর্থতা ছিল, কিন্তু সফলতাও ছিল উল্লেখযোগ্য। অতীতেও সংকট কাটিয়ে দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবারও তা সম্ভব।"
তবে দলটির বাস্তবতা অন্য কথা বলে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত জনবিচ্ছিন্নতা এবং নেতাকর্মীদের পলায়নপর মনোভাব ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ফিরিয়ে আনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে সরকার কঠোর দমননীতি অবলম্বন করে। পুলিশের গুলি ও হামলায় শত শত শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হয়।
পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল কার্যক্রম অনলাইনে সীমিত আকারে পরিচালিত হচ্ছে।
২০২৫ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ এখন—তাদের জনসমর্থন পুনরুদ্ধার এবং গণআস্থা ফেরানো। তবে বাস্তবতা বলছে, এই পথ সহজ হবে না।
সূত্র জাগোনিউজ ২৪
এসআর
মন্তব্য করুন: