বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
বিশেষ করে বিএনপি দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এবং আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে চলমান এসব আলোচনার মধ্যে গত ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যেখানে তিনি নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেন। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে জানান, আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এই নির্বাচনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করতে পারলেও, আওয়ামী লীগ এর অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে কথা বলার সময় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই। তার এই মন্তব্যের পর তা প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যা রোববার রাতেই বিবৃতি দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে জানান, আওয়ামী লীগকে গণহত্যায় দায়ী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নই উঠবে না। আন্দোলনটি মনে করে, আওয়ামী লীগ বা তাদের শরিকদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ জনতার আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।
গত বৃহস্পতিবার রংপুরে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে বৈঠক শেষে মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কোনো দলকে বাধা দেওয়া হবে না, এবং নির্বাচনে প্রস্তুত দলগুলো অংশগ্রহণ করতে পারবে। তার মতে, যতক্ষণ না কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে আইনি বাধা দেওয়া হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সব দলকেই এই সুযোগ পাওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগের বিচার ও নির্বাচন
আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) একাধিক মামলা চলছে। বিশেষ করে গত ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যা, গুম, খুন এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক মাসে বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের হয়েছে, এবং তাদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার দাবি করে আন্দোলন করছে। তারা মনে করে, আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তবে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
নির্বাচনি আইন ও প্রক্রিয়া
বাংলাদেশের নির্বাচনি আইন অনুসারে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা জানান, যদি কোনো দল আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয় কিংবা নির্বাহী আদেশে কোনো দল নিষিদ্ধ হয়, তবে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। এই ধরনের একটি পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বাধা দিতে পারে।
এছাড়া, নির্বাচনি আইন অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তিনি আজীবন নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হয়ে যাবেন। তবে, বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, তার কমিশন আইসিটি আইনের এই ধারাটি বাদ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আওয়ামী লীগের বিচার
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, ট্রাইব্যুনালে অনেক মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে আনুষ্ঠানিক চার্জ দাখিল করা হবে এবং পরে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলের বিচার নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
তবে, একথা স্পষ্ট যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বিষয়টি এখন আদালত এবং আইনি প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে। বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির অংশগ্রহণের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
উপসংহার
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা এবং আইনি বাধা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। বিচারাধীন মামলাগুলোর ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে দলটির নির্বাচনী ভাগ্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতের সিদ্ধান্তই মূল ভূমিকা পালন করবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: