গত ৫ আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যু এবং রক্তদানের ফলস্বরূপ ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার, যা প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে কার্যরত। সরকার গঠনের শুরু থেকেই বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। তবে শুরু থেকেই দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামীও প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। শুরুতে তারা বলেছিল, "সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে", তবে সম্প্রতি জামায়াতের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচনের দাবি তোলা হয়েছে। তাদের ঘোষণায় দেশের রাজনীতিকরা মন্তব্য করেছেন যে, জামায়াতের নতুন অবস্থান নির্বাচনের বিষয়ে আরও জোরালো মনোভাব প্রকাশ করছে। এর মাধ্যমে দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সবার অভিলাষ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—তাদের আশা, অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করবে এবং গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
বিজয় দিবসের ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন। জামায়াতে ইসলামী তাদের দাবির মধ্যে দিয়ে সরকারের দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গত শুক্রবার জামায়াতে ইসলামী আমির শফিকুর রহমান বলেন, "সরকার নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছে, তবে সুস্পষ্ট ঘোষণা এখনো দেয়নি। সংস্কার দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যান এবং ঘোষণা দিন।"
এরপর, জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ২০২৫ সালের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান। তিনি বলেন, "২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়। তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে এসব সংস্কার সম্ভব এবং তারপর বছরের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।"
জামায়াতে ইসলামী নেতাদের নির্বাচনী দাবির বিষয়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, "যদিও নির্বাচনের বিষয়ে এখনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি, অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা হলেও জনগণকে নির্বাচনের সম্ভাবনার বিষয়ে ধারণা দিয়েছে। আমাদের আশা, সরকার দ্রুত নির্বাচনমুখী সংস্কারগুলো করবে এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে।"
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, "নির্বাচনের সময়সূচী দুই-চার মাস পিছিয়ে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। সরকার যদি নির্বাচনে কোনও ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়ম ঘটায়, তবে তা দেশের জনগণের জন্য কোনো উপকারে আসবে না। সুতরাং, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পথে এগিয়ে যেতে হবে, এবং সরকারকে এই লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।"
জামায়াতে ইসলামী এবং দেশের জনগণ সরকারের কাছে নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা কামনা করছে, তবে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং সংস্কার প্রয়োজনীয় বলে তারা মনে করে।
এসআর
মন্তব্য করুন: