[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
১৭ আশ্বিন ১৪৩২

প্রতিশ্রুতির রাজনীতি থেকে জবাবদিহির রাজনীতি

আয়নুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২৫ ৩:০৫ পিএম

আয়নুল ইসলাম

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে আছে প্রতিশ্রুতি।

নির্বাচনী ইশতেহার, রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা সমাবেশের মঞ্চ—সব জায়গাতেই জনগণকে নানা আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সেসব প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবে রূপ নেয়?

আজকের আলোচনায় থাকছে—আমাদের রাজনীতিতে জবাবদিহির ঘাটতি কেন, এবং কবে আমরা কাঙ্ক্ষিত “জবাবদিহির রাজনীতি” গড়ে তুলতে পারব।

প্রতিশ্রুতির ইতিহাস

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতিটি নির্বাচন মানেই ছিল প্রতিশ্রুতির ছড়াছড়ি।

  • স্বাধীনতার পর খাদ্য ঘাটতি দূরীকরণ, শিক্ষা বিস্তার ও দারিদ্র্য হ্রাসকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
  • পরবর্তীতে শিল্পায়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠে।

বাস্তবে কিছু প্রতিশ্রুতি আংশিক পূরণ হলেও অধিকাংশই থেকে গেছে অসম্পূর্ণ। ফলশ্রুতিতে জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা ও আস্থাহীনতা।

জবাবদিহির অভাব

গণতন্ত্রে জনগণই ক্ষমতার উৎস, আর রাজনীতিবিদদের কাজ হলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জবাবদিহিতা শক্ত ভিত্তি পায়নি।

নির্বাচনের পর জনগণ প্রায় ভুলে যায় কে কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আবার নেতারাও পুরোনো প্রতিশ্রুতির হিসাব না দিয়ে নতুন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়ান। এর ফলে রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অপ্রকাশিত দায়মুক্তি—ভোট হবে, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে না।

এই শূন্যতাই দুর্নীতি বাড়ায়, সুশাসন ভেঙে ফেলে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তোলে।

উন্নত গণতন্ত্রের চর্চা

উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাজের অগ্রগতি স্পষ্টভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়। প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি অর্জন ও ব্যর্থতার তথ্য-পরিসংখ্যান জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়। এ কারণেই সেসব দেশে রাজনীতিবিদরা জবাবদিহি এড়িয়ে যেতে পারেন না।

বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

বাংলাদেশে জবাবদিহির রাজনীতি প্রতিষ্ঠা সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন জরুরি—
১. ইশতেহার অগ্রগতি প্রতিবেদন: রাজনৈতিক দলগুলোকে বছরে একবার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রকাশ করতে হবে।
২. গণমাধ্যমের দায়িত্ব: সাংবাদিকদের প্রতিটি প্রতিশ্রুতির ফলো-আপ করে জনগণকে প্রকৃত চিত্র জানাতে হবে।
৩. জনগণের সচেতনতা: ভোট দেওয়ার আগে শুধুই নতুন প্রতিশ্রুতি নয়, অতীতের কার্যক্রমের হিসাব চাইতে হবে।
৪. তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ: শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক ও জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
৫. প্রযুক্তির ব্যবহার: সরকারি প্রকল্প ও প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি অনলাইনে জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।

যদি রাজনীতি কেবল প্রতিশ্রুতির ভেলায় ভেসে চলে, তবে জনগণের আস্থা ক্ষয় হতে থাকবে। আস্থাহীন গণতন্ত্র টেকসই হয় না। এখন সময় এসেছে রাজনীতিকে নতুনভাবে ভাবার—যেখানে প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি থাকবে জবাবদিহির কঠোর সংস্কৃতি।

আমরা সেই দিনটির প্রত্যাশা করি, যেদিন রাজনীতি আর ক্ষমতার খেলা হবে না, বরং হবে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সেবার হাতিয়ার। প্রতিশ্রুতির রাজনীতি থেকে জবাবদিহির রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নের পথে।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর