একটি গণতান্ত্রিক দেশের অগ্রগতির মূল ভিত্তিই নির্ভর করে অর্থনীতির চালিকা শক্তির উপর।
প্রতিবছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাজেট মোটা তাজা হচ্ছে। বার্ষিক বাজেট লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। বাজেটের পরিধি বেড়েছে, সঙ্গে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে আনুপাতিক হারে।
বিভিন্ন সমীক্ষায় বিশেষ করে দেশের সব গণমাধ্যমে; এমনকি রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ কিংবা সুশীল সমাজের বক্তব্য অনুযায়ী দুর্নীতির করাল গ্রাসে দেশ নিমজ্জিত।
নতুন বাংলাদেশের নতুন সরকার দুর্নীতির বলয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কখনো কখনো দুর্নীতিতে বিশ্ব র্যাংকিং-এ এক নম্বর স্থানও অর্জন করেছে আমাদের বাংলাদেশ।
কথায় কথায় উন্নয়নের মহাসড়কের ফিরিস্তি শুনতে পাচ্ছিলাম অহরহ। দেশের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারেও নামতে দেখেছে জনগণ।
উন্নয়নের মহাসড়কে দেশের অর্থনীতিকে চলমান রাখার জন্য বছর বছর নতুন নতুন ট্যাক্সের চাকায় পিষ্ট হতে হয়েছে জনগণকে।
অগণতান্ত্রিক উপায়ে দেশ পরিচালনা করলে দেশের অর্থনীতির স্থবিরতা নেমে আসতে পারে। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের চোখের সামনে গজে উঠেছে অটোরিকশা নামক তিন চাকার বাহন। যা আজ নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে খোদ রাজধানী ঢাকায় অটোরিকশার যত্রতত্র ব্যবহার দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত জনগণের কর্মঘণ্টা নষ্ট করে দিচ্ছে। বিশেষ করে চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের পর থেকে কয়েক লাখ অটোরিকশার আবির্ভাব ঘটতে দেখেছে রাজধানীবাসী।
সময় অত্যন্ত মূল্যবান, কিন্তু সেই মূল্যবান সময়কে কেড়ে নিচ্ছে তিন চাকার রেজিস্ট্রেশনবিহীন এই বাহনটি। প্রশিক্ষণবিহীন চালকদের সরব উপস্থিতি, কোনো ধরনের ট্রাফিক আইন না মানাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
কোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছাড়াই এই বাহনটি সবার চোখের সামনেই সব নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যান্ত্রিক যানবাহনগুলো প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স দিয়ে থাকে। কিন্তু ট্যাক্সবিহীন চালিত অটোরিকশা নামক যানবাহনটি সড়ক-মহাসড়কে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেই চলেছে।
প্রতিদিন হাজার হাজার অটোরিকশা দেশের সব জেলা-উপজেলা দখল করে চলেছে।
শহর-উপশহর থেকে শুরু করে হাইওয়েতে অটোরিকশার যত্রতত্র চলাচল নানা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন হাসপাতাল বিশেষ করে পঙ্গু হাসপাতালের চিত্র দেখলেই বোঝা যায়-এ এক নারকীয় তাণ্ডব। যা নিয়ন্ত্রণ করা খুব বেশি কঠিন ছিল না।
এই ব্যাটারিচালিত রিকশা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে করে তুলেছে অসহনীয়। অনির্ধারিত অবৈধ চার্জিং-এর ফলে সারা দেশ লোডশেডিং-এর খপ্পরে পড়ে আছে। অথচ প্রশাসন ইচ্ছে করলেই অটোরিকশার উৎপাদন স্থান চিহ্নিত করে সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব ছিল। কাকে লাভবান করার জন্য এ ধরনের বিপদকে সাদরে সম্ভাষণ জানিয়েছে আমাদের সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, হাইওয়ে পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ, সড়ক বিভাগসহ সংযুক্ত সব প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
অনেকদিন ধরেই আমাদের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-এর একটি টিম কাজ করছে এ যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য। যার মধ্যেই ব্যাঙের ছাতার মতো সারা দেশ ছেয়ে গেছে অটোরিকশায়। ট্যাক্স প্রদেয় বাহনগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অটোরিকশার দৌরাত্ম্যের কারণে।
যানজট নাগরিক জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু এই যানজট নিরসনে বাস্তবমুখী কর্মসূচি দেখতে পাই না আমরা। ঢাকায় আধুনিক মেট্রোরেল, এলিভেটেড ওয়ে নির্মিত হয়েছে।
তেমনিভাবে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে এলিভেটেড ওয়ে নির্মাণের ফলে যানজট নিরসনের একটা সম্ভাবনা ছিল।
কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সব পরিকল্পনা ম্লান করে দিয়েছে। এখনো সময় সুযোগ দুটোই আছে সঠিক পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নের মাধ্যমে অটোরিকশা চলাচলের উপর লাগাম টেনে ধরুন। না হলে নতুন বাংলাদেশ নতুন অর্থনীতির সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে।
বিশাল জনগোষ্ঠী এরইমধ্যে অটোরিকশা পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। তাদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা খুঁজে দেশের অগ্রসরমান অর্থনীতির অগ্রসরতাকে বজায় রাখার ব্যবস্থা করুন। না হলে আপনি আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জবাবদিহিতার পথ খুঁজে পাব না।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, ঢাকা পোস্ট
এসআর
মন্তব্য করুন: