[email protected] রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
৮ আষাঢ় ১৪৩২

ডিজিটাল কৌশলে রাজনীতি: প্রযুক্তির ছোয়ায় রাজনীতির ভবিষ্যৎ

আয়নুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২৫ ১২:৫০ এএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ ১২:৫৬ এএম

সংগৃহীত ছবি

এক সময় রাজনৈতিক প্রচার মানেই ছিল পোস্টার-লিফলেট, জনসভা, মাইকিং কিংবা নির্বাচন আসলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া।

কিন্তু এখন সময় বদলেছে। যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল প্রচার মাধ্যম এমনকি বদলেছে কৌশলও। এখন রাজনীতির মাঠে শুধু বক্তৃতা দিয়ে নয়, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনেই লড়তে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোকে।

বাংলাদেশের রাজনীতিও এখন প্রযুক্তিনির্ভর বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। ভোটারদের প্রভাবিত করতে এবং প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে রাজনীতিবীদদের রীতিমতো করতে হচ্ছে নতুন যুদ্ধ। যার অস্ত্র ‘ডেটা’, যার ময়দান ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, এবং যার লক্ষ্য—জনমত নিয়ন্ত্রণ।

বর্তমানে রাজনৈতিক দলের ফেসবুক পেজে বেড়ে গেছে লাইভ ভিডিও, গ্রাফিক্সভিত্তিক বার্তা, আবেগী গান বা কবিতায় মোড়ানো প্রচারচিত্র। পোস্ট আর ইউটিউব শর্টসের মাধ্যমে দলীয় বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের আনাচে কানাচে।

এই প্রচারের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু কেবল তথ্য দেওয়া নয়, বরং ‘ভাবমূর্তি’ গড়ে তোলা এবং প্রতিপক্ষের ভাবমূর্তি ধ্বংস করা। সোশ্যাল মিডিয়ার ‘মুড’ ধরে রাখতে এখন আলাদা ডিজিটাল টিম রাখা হয়, যারা কেবল মেসেজ কিউরেট করে, মিমস তৈরি করে, ট্রল করে কিংবা ট্রেন্ড বানায়। একটি দলকে মহান ও আরেকটি দলকে হেয় করার লড়াই এখন চলে পোস্ট, রিলস আর হ্যাশট্যাগে।

প্রযুক্তির এই চিত্রের আড়ালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিগ ডেটা ও মাইক্রোটার্গেটিং।রাজনীতিবীদরা এখন কেবল বয়স, লিঙ্গ বা পেশাভিত্তিক নয়, বরং একজন ভোটার কি নিয়ে উদ্বিগ্ন, কোন ইস্যুতে সে আগ্রহী, এমনকি সে কী টাইমে মোবাইল ব্রাউজ করে- এসব তথ্য বিশ্লেষণ করেই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

বর্তমানে প্রযুক্তি শুধু প্রচারে নয়, নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হচ্ছে অনেক বেশি।বিশেষ করে যারা সরকারের বিরোধিতা করে বা আলাদা মত পোষণ করে, তাদের ওপর নজর রাখার জন্য এখন বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। একটি গোপন ও ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, যেখানে নাগরিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে গণতন্ত্রের ভিত্তি স্বাধীন মতপ্রকাশ, সেই ভিত্তিই যেন ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায় ডিজিটাল চোখের চাপে।

তবে প্রযুক্তি যে শুধুই ভয়ানক, এমন নয়। বরং এর মাধ্যমেই তথ্যভিত্তিক বিতর্ক, জনমত জরিপ, রাজনৈতিক স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

ইভিএম বা ডিজিটাল ভোটিং সিস্টেম যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে নির্বাচন হতে পারে আরও বিশ্বাসযোগ্য। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো সম্ভব। সংবাদমাধ্যম ও ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্মগুলো আরও সক্রিয় হলে ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আজকের দিনে এসে প্রশ্নটা জটিল, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ— প্রযুক্তি কি রাজনীতিকে রূপান্তর করছে? নাকি রাজনীতিই প্রযুক্তিকে অস্ত্র বানিয়ে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করছে? উত্তরটা হয়তো সময় দেবে, কিন্তু এখনই দরকার প্রযুক্তিনির্ভর এই রাজনীতির উপর জনদৃষ্টি এবং নীতিগত সংস্কার।

কারণ, স্মার্ট বাংলাদেশের শুধু প্রযুক্তি দিয়ে নয়,স্মার্ট গণতন্ত্র দিয়েই পূর্ণতা পাওয়া উচিত।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর