দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। কুমিল্লার শ্রীকাইল, পাবনার মোবারকপুর ও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় তিনটি অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য ১ হাজার ১৩৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। শিল্প ও গৃহস্থালি খাতে জ্বালানির বাড়তি চাহিদা মেটাতে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধিই এর মূল লক্ষ্য।
সরকারি নথি অনুসারে, ‘শ্রীকাইল ডিপ-১, মোবারকপুর ডিপ-১ ও ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১—এই তিনটি অনুসন্ধান কূপ খনন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। প্রকল্প খরচের মধ্যে সরকারের বরাদ্দ থাকবে ৯০৯ কোটি টাকা, আর বাপেক্স নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে ২২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
সারা দেশে বাপেক্সের প্রস্তাবিত ২০টি নতুন কূপ খনন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ অনুমোদন এসেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
সভা-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, গ্যাস অনুসন্ধানে দীর্ঘদিন ধরে অগ্রগতি হয়নি। গত ১৫ বছরে নতুন কোনো কূপ খনন হয়নি, বাপেক্সকেও যথাযথভাবে শক্তিশালী করা হয়নি। এখন থেকেই কাজ শুরু না করলে ভবিষ্যতে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। প্রথমবারের মতো খনন-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি কেনা ও পরবর্তী কাজের জন্য অর্থায়ন করে বাপেক্সকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প নকশা অনুযায়ী—
শ্রীকাইল ডিপ-১ ও মোবারকপুর ডিপ-১ কূপ খনন হবে ৬,০০০ মিটার গভীরে,
ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১ কূপ খনন করা হবে ৪,০০০ মিটার গভীরতায়।
কাজের মধ্যে থাকবে রিগ স্থাপন–বসরানো, ফাউন্ডেশন নির্মাণ, খনন কার্যক্রম, পরীক্ষা ও সম্পন্নকরণ সেবা। বিশেষ করে শ্রীকাইল ও মোবারকপুরের গভীর কূপগুলোর জন্য পরামর্শক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, বাপেক্সের সংগৃহীত ভূতাত্ত্বিক তথ্য ও থ্রি-ডি সিসমিক জরিপ বিশ্লেষণ করে এসব স্থানে উল্লেখযোগ্য গ্যাসের সম্ভাবনা পাওয়া গেছে। বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস প্রাপ্ত হলে তিন কূপে আনুমানিক ১,৬৯৬.৩৬ বিসিএফ গ্যাস থাকতে পারে, যার মধ্যে ১,০১৮.১৪ বিসিএফ উত্তোলনযোগ্য হতে পারে—যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় উৎপাদন বাড়ালে আমদানি করা এলএনজি-র ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং জাতীয় রিজার্ভও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
২০২৫ সালের ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। কমিটি সময়মতো বাস্তবায়ন, পেট্রোবাংলার সঙ্গে সমন্বয় এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় গ্যাস সরবরাহে চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের প্রকল্প সময়োপযোগী। শিল্পায়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে। নতুন দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হলে আমদানি ব্যয় কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আরও স্থিতিশীল হবে।
বাপেক্স সাম্প্রতিক সময়ে নতুন সম্ভাবনাময় এলাকায় টু-ডি ও থ্রি-ডি সিসমিক জরিপ করে বেশ কয়েকটি কাঠামো চিহ্নিত করেছে। একনেকের অনুমোদিত নতুন উদ্যোগটি জ্বালানি খাতের রোডম্যাপ অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে—এমন প্রত্যাশা নীতিনির্ধারকদের।
এসআর
মন্তব্য করুন: