[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভূমিকম্প মোকাবিলায় জাপান থেকে যা শিখতে পারে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ৭:৫০ পিএম

সংগৃহীত ছবি

‘ঢাকায় কি ভূমিকম্প হলো?’—সাম্প্রতিক কয়েক দফা কম্পনের পর এমন প্রশ্ন এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অনেকে প্রতিদিনই গুগলে ‘আর্থকোয়েক টুডে’ লিখে অনুসন্ধান করছেন। ২১ নভেম্বরের পর এক সপ্তাহে ছয়বার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় জনমনে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা এখনো কাটেনি।

এই সময় ভূমিকম্প নিয়ে নানা আলোচনা সামনে আসছে। বাংলাদেশে ভূমিকম্প বড় কোনো নিয়মিত দুর্যোগ না হলেও ঠিক পাশের দেশ জাপানে এটি নিত্যদিনের ঘটনা। বছরে সেখানে প্রায় দেড় হাজার ভূমিকম্প হয়; সুনামি সতর্কতাও থাকে নিয়মিত। প্রশ্ন হলো—জাপান কীভাবে এসব মোকাবিলা করে? এবং কেঁপে ওঠা বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে কী শিখতে পারে?

জাপানি দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ার’-এ—যেখানে ইউরেশিয়ান, ফিলিপাইন ও প্যাসিফিক টেকটোনিক প্লেট মিলিত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ভূতাত্ত্বিক সক্রিয় অঞ্চলের ওপর অবস্থান করায় দেশটিতে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প একরকম স্বাভাবিক ঘটনা; ছোট ভূমিকম্প তো অনেক নাগরিক টেরই পান না। তবে বড় ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতাও জাপানের দীর্ঘ ইতিহাসে কম নয়।

বাংলাদেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের প্রস্তুতি থাকলেও ভূমিকম্প নিয়ে সরকারি বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে তেমন প্রস্তুতি নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাম্প্রতিক কম্পনে আতঙ্কের মাত্রাই প্রমাণ করে বাংলাদেশকে ভূমিকম্প-বিষয়ক প্রস্তুতি বাড়াতেই হবে।

ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ূন আখতার বলেন, জাপানে ভূমিকম্প হলেই মানুষ ভয় পায় না—এটি কেবল অভ্যাসের কারণে নয়; বরং দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা ও প্রস্তুতির ফল।

স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব জানান, জাপানে শিশুর জন্মের পর থেকেই তাকে ভূমিকম্প বিষয়ে শেখানো হয়। স্কুলে নিয়মিত মহড়ায় তারা শিখে—কম্পন লাগলে কীভাবে ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিতে হয়, কোথায় নিরাপদ জায়গা, কীভাবে দ্রুত বের হতে হয়। সাধারণত প্রতি ১৫ দিনে এসব ড্রিল পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশেও কম খরচে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নিয়মিত ড্রিল চালু করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জাপানের প্রতিটি এলাকায় পার্ক, খেলার মাঠ বা খোলা জায়গাকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা থাকে এবং সবাই তা জানে। ভূমিকম্পের পর নাগরিকরা দ্রুত ভবন থেকে বের হয় এবং নির্ধারিত খোলা স্থানে আশ্রয় নেয়।

ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খোলামেলা নিরাপদ জায়গার অভাব বড় ঝুঁকি। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দ্রুত এসব স্থান শনাক্ত করে জনগণকে জানানো জরুরি।

জাপানে আকাশচুম্বী ভবনগুলো বিশেষ নকশায় তৈরি—কাঁপে না, বরং দুলে ক্ষতি কমায়।

বাংলাদেশে বড় ভবনগুলো সাধারণত বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হলেও ছোট মালিকানাধীন ভবনগুলোর ক্ষেত্রে কোড অমান্যের অভিযোগ বেশি। ইকবাল হাবিবের মতে, এই ভবনগুলোই ভূমিকম্পে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোড বাস্তবায়ন কঠোর করতে হবে।

জাপানে প্রতিটি দুর্যোগের আগে-পরে করণীয় নির্ধারণ করে রেজিলিয়েন্স প্ল্যান থাকে—অর্থাৎ বিপর্যয়ের পর কীভাবে দ্রুত সেবা পুনরুদ্ধার, উদ্ধার অভিযান, চিকিৎসা, খাদ্য ও আশ্রয় প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশেও এ ধরনের কাঠামোবদ্ধ পরিকল্পনা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

(আপনি চাইলে এই অংশটি বিস্তারিতভাবে লিখে দিতে পারি—বেইস আইসোলেশন, শক অ্যাবজরবার, ড্যাম্পার সিস্টেম, টিউনড মাস ড্যাম্পার, স্টিল-ফ্রেমড স্ট্রাকচারসহ সব প্রযুক্তি ব্যাখ্যা করে।)

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর