[email protected] রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে নরসিংদী অঞ্চলে, সামনে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫ ৮:২০ পিএম

সংগৃহীত ছবি

নরসিংদীর মাধবদীতে শুক্রবারের ভূমিকম্প মুহূর্তে কাঁপিয়ে তোলে রাজধানীসহ পুরো দেশকে।

রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার এই ভূকম্পনে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের মৃত্যু এবং পাঁচশ’র বেশি মানুষ আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশি–বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে, মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে সঞ্চিত শক্তির হঠাৎ মুক্তির কারণেই এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি।

ইউএসজিএস জানায়, প্রায় সাত কোটি মানুষ বিভিন্ন মাত্রার ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। আবহাওয়া বিভাগ একে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবারের বড় ভূমিকম্পের পর শনিবারও একই এলাকায় আরও দুটি ভূমিকম্প হয়—মাত্রা ছিল ৩.৩ এবং ৪.৩। এই ধারাবাহিক কম্পন ভূগর্ভে জমে থাকা শক্তি আরও বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কেন নরসিংদী হঠাৎ শক্তিশালী ভূমিকম্পের কেন্দ্র হয়ে উঠল?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, এই ভূমিকম্প মূলত ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংঘর্ষ অঞ্চলের ফল।

তিনি জানান—

  • পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ টেকটোনিক প্লেটে বিভক্ত।
  • প্লেটগুলোর ধাক্কা, সরে যাওয়া বা আটকে গিয়ে শক্তি জমার প্রক্রিয়াতেই ভূমিকম্প হয়।
  • নরসিংদী অঞ্চলে দুই প্লেটের সংযোগস্থল অনেক দিন ধরে লকড হয়ে ছিল।
  • শুক্রবার সেই লকড অংশের অতি ক্ষুদ্র অংশ খুলে গিয়ে শক্তির সামান্য অংশ মুক্ত হয়—যা আরও বড় শক্তি জমার আশঙ্কা নির্দেশ করে।ইতিহাস বলছে—এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের প্রবণতা আছে

ইউএসজিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলেই ১৯৫০ সালের পর থেকে ৫.৫ মাত্রা বা তার বেশি শক্তির ১৪টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির দুই প্রধান উৎস—

  1. ডাউকি ফল্ট
  2. সিলেট–চট্টগ্রাম–টেকনাফ ফল্ট জোন

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুই উৎসই অত্যন্ত বিপজ্জনক।৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে—৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা

অধ্যাপক হুমায়ুন আখতারের মতে—

  • সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাবডাকশন জোনে ৮০০ বছরের বেশি সময় ধরে শক্তি জমছে।
  • সেখানে এখন ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো শক্তি জমা রয়েছে।
  • নরসিংদীর সাম্প্রতিক ভূমিকম্প সেই শক্তির অতি সামান্য অংশ বের হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

তিনি সতর্ক করে বলেন—

“এই শক্তি বের হবেই। আর তা হলে ঢাকা নগরী ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। এখন আর অবহেলা করার সুযোগ নেই; জরুরি প্রস্তুতি শক্তিশালী করতে হবে।”

আগের বড় ভূমিকম্পের নজির

বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বড় ভূকম্পনের বেশ কিছু প্রমাণ ইতিহাসে রয়েছে—

  • ১৭৯৭: ব্রহ্মপুত্র নদ নতুন গতিপথে সরে যায়, মেঘনার পথ বদলে যায় ২০-৪০ কিলোমিটার।
  • ১৭৬২: টেকনাফ–মিয়ানমারে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৩ মিটার ওপরে উঠে আসে।
  • ১৯২২: সিলেট–মৌলভীবাজার অঞ্চলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প।
  • ১৮৬৮: একই অঞ্চলে ৭.৫ মাত্রা।
  • ১৮৯৭: ডাউকি ফল্টে ৮.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প।

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন—যে উৎসেই বড় ভূমিকম্প হোক, ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দুর্বল কাঠামোর কারণে রাজধানী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর