বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনের এই সময়ে বাংলাদেশ কোনো পক্ষের সঙ্গে সরাসরি অবস্থান না নিয়ে “সঠিক পথ” বেছে নিয়ে এগোবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “অনেক দেশ পুনর্গঠনের সময় পক্ষ বেছে নিতে চায়, তবে বাংলাদেশ প্রথমে বেছে নেবে সঠিক পথ—জাতীয় স্বার্থই হবে আমাদের প্রধান বিবেচনা।”
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর এক হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন,
“পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অংশ নেবে। আমরা প্রয়োজন হলে স্পষ্টভাবে কথা বলব। জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
তিনি আরও বলেন, সার্বভৌমত্ব অটুট রেখে বাংলাদেশ এমন অংশীদারিত্ব চায়—যার দৃশ্যমান ফলাফল পাওয়া যায়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন,
“বঙ্গোপসাগর এখন কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশ এখানে আত্মবিশ্বাসী ভূমিকা রাখতে চায়—শুধু একটি করিডোরে পরিণত হয়ে নয়।”
ইউক্রেন, গাজা, সুদান ও মিয়ানমারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন,
“এই সংকটগুলো দেখিয়েছে—বর্তমান আন্তর্জাতিক কাঠামো কার্যকরভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও শক্তিশালী হওয়া জরুরি।”
তৌহিদ হোসেন বলেন,
“জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ—দুটিই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ মানবিক দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
বর্তমান তথ্যযুদ্ধ ও প্রযুক্তি হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন,
“ভুয়া তথ্য, ডিপফেক ও এআই-নির্ভর প্রভাব কূটনীতি ও শাসনব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ তথ্যক্ষেত্রকে সুরক্ষিত রাখতে চায় এবং এমন কাঠামো গড়তে চায় যা নিরাপত্তা ও মানবাধিকার দুটোই রক্ষা করবে।”
বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা, নিষেধাজ্ঞা ও ঝুঁকি-এড়ানোর প্রবণতার কারণে বাংলাদেশকে বহুমুখীকরণ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,
“পারস্পরিক লাভ, স্থিতিস্থাপকতা ও সংযোগের ভিত্তিতে নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।”
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লবণাক্ততার অনুপ্রবেশকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও জলবায়ু সহনশীল যৌথ নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
এবারের ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’-এর মূল প্রতিপাদ্য— ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভাঙন, পুনর্গঠন’।
সম্মেলনে তথ্যযুদ্ধ, এআই, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক চাপ, অভিবাসনসহ সমসাময়িক বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: