সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত—আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা ছিলেন— বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
রায়ে বলা হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তবে চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরায় কার্যকর হবে।
২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করে। সরকার পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল দাবিতে নতুন আইনি লড়াই শুরু হয়। এ বছরের ২৭ আগস্ট পুনর্বিবেচনার আবেদন মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ শুনানির অনুমতি দেয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার এবং পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিক এ বিষয়ে পৃথক আপিল করেন। ২২ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত বহুদিন ধরে শুনানি শেষে ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়।
শিশির মনির জানান, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা সম্ভব নয়, কারণ সংবিধানে বলা আছে—সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। বর্তমানে সংসদ ভেঙে আছে দীর্ঘদিন। তাই তারা চৌদ্দতম সংসদ নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
১৯৯৬ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এই ব্যবস্থায় ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন হয়।
২০০৪ সালে এ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক দাবি করে রিট করা হয়, তবে ওই বছরই হাইকোর্ট ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে। আপিল বিভাগসহ বহু সংবিধান বিশেষজ্ঞও পদ্ধতি বহালের পক্ষে মত দেন।
২০১১ সালে আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে পদ্ধতিটি বাতিল করলেও পরবর্তী দুই নির্বাচন প্রয়োজনের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে পর্যবেক্ষণ দেন। পরে পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা বাদ পড়ে এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে ওই বাতিল রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। দীর্ঘ শুনানির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করে আপিল বিভাগ নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নির্বাচনী কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
এসআর
মন্তব্য করুন: