বাংলাদেশের নদীমাতৃক ঐতিহ্যের স্মারক শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ আবারও যাত্রীবাহী প্রমোদতরী হিসেবে নৌপথে ফিরেছে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর সদরঘাটে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন। নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের নদী–সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরাই এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুতফে সিদ্দিকীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পিএস মাহসুদ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নৌ–পর্যটনের মধ্যে এক অনন্য সেতুবন্ধন তৈরি করবে।” তিনি জানান, আগামী ২১ নভেম্বর থেকে ঢাকা–বরিশাল রুটে নিয়মিত ভ্রমণ সেবা শুরু করবে স্টিমারটি। শতবর্ষী এই জাহাজ পুনরায় চালুর সিদ্ধান্তে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “পিএস মাহসুদ শুধু একটি জাহাজ নয়, এটি আমাদের নদীমাতৃক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। নতুন প্রজন্মকে দেখাতে চাই—একসময় নদীই ছিল দেশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।”
নৌ–পরিবহন সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী জানান, পুনরায় চালু হওয়া এই প্যাডেল স্টিমার দেশি–বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। স্টিমারটিতে থাকছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন, লাইভ বাংলা সংগীত ও নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা জানান, স্টিমারটির সংস্কারে মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রাখা হলেও ইঞ্জিন, নিরাপত্তা ও অগ্নি–নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিক প্রযুক্তিতে রূপান্তর করা হয়েছে। জাহাজে যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক কেবিন, সুবিধাজনক ডেক এবং ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা।
স্টিমারটি প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল এবং প্রতি শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকা ছাড়বে। সকাল ৮টায় সদরঘাট থেকে ছেড়ে রাতে বরিশালে পৌঁছাবে। ভ্রমণে যাত্রীরা উপভোগ করতে পারবেন নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শতবর্ষী জাহাজে ভ্রমণের অনন্য অভিজ্ঞতা।
নিরাপত্তার জন্য রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের লাইফবোট, উন্নত অগ্নি–নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং জিপিএস ব্যবস্থা। এছাড়া পরিবেশবান্ধব কম কার্বন–নিঃসরণ প্রযুক্তির ইঞ্জিন ব্যবহারের ফলে নদী দূষণ কমবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এর আগে পিএস মাহসুদ কেবল রাতেই চলাচল করত। এবার দিনের ভ্রমণ যুক্ত হওয়ায় পর্যটকরা নদী ও তীরবর্তী প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন বলে আশা করছে বিআইডব্লিউটিসি।
এসআর
মন্তব্য করুন: