আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট আয়োজন করা হবে। এতে সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে না; বরং নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে।”
তিনি আরও জানান, গণভোট আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন যথাসময়ে প্রণয়ন করা হবে।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, “গত নয় মাস ধরে রাষ্ট্রগঠন ও সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি বিষয়ে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।”
তিনি এসময় জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়নের প্রস্তাবসমূহ গণভোটে উপস্থাপনের বিষয়েও বিস্তারিত জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গণভোটে একটি প্রশ্ন রাখা হবে, যার মাধ্যমে জনগণ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং সেখানে লিপিবদ্ধ সাংবিধানিক সংস্কারগুলোর প্রতি সম্মতি বা অসম্মতি জানাবেন।”
গণভোটে ভোটারদের সামনে উপস্থাপিত হবে চারটি মূল বিষয়:
(ক) নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী গঠন করা হবে;
(খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট — যেখানে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে;
(গ) নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, ডেপুটি স্পিকার ও কমিটির সভাপতির পদে বিরোধী দলের সদস্যদের অংশগ্রহণ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা–সহ ৩০টি বিষয়ের সংস্কার বাস্তবায়নে বিজয়ী দল বাধ্য থাকবে;
(ঘ) জুলাই সনদে উল্লিখিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে।
গণভোটে এসব বিষয় নিয়ে একটি মাত্র প্রশ্নে ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে তাদের মতামত জানাবেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর আগে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভোট আয়োজন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দুটি বিকল্প প্রস্তাব জমা দেয়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরিত আদেশ অনুযায়ীই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন, যেখানে সংবিধান সংস্কার ও জাতীয় পুনর্গঠনের মূল দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়।
এসআর
মন্তব্য করুন: