[email protected] শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫
২৩ কার্তিক ১৪৩২

কৃষি নীতিগুলোর মধ্যে অসংগতি টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের পথে অন্তরায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০২৫ ৭:১৬ এএম

বাংলাদেশের কৃষি খাতে গত পাঁচ দশকে ব্যাপক অগ্রগতি এসেছে। কৃষিজমি কমলেও

 

উৎপাদন বেড়েছে বহুগুণ। তবে কৃষি সংশ্লিষ্ট নীতিমালাগুলোর মধ্যে অসংগতি ও দ্বৈততার কারণে টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এখন সময় এসেছে নীতিগুলো পুনর্বিবেচনা করে পরিবেশসম্মত কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থাকে জাতীয় কৃষি নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর বিডিবিএল ভবনে বণিক বার্তার কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত “জাতীয় কৃষি নীতির বিভিন্ন দিক এবং কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণ” শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে এ মত দেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে অ্যাগ্রোইকোলজি কোয়ালিশন বাংলাদেশ, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা ওয়েল্থহাঙ্গারহিলফে (WHH)। সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর কাদের। প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।

ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর সোস্যাল রিসার্চের গবেষণা পরিচালক আহমেদ বোরহান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে সফল হলেও অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মাটি ও পানির দূষণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষি এখন হুমকির মুখে। কৃষি খাতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হারও ৩৯ শতাংশে পৌঁছেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, বিদ্যমান কৃষি নীতিগুলোর মধ্যে দ্বৈততা রয়েছে। যেমন—একদিকে টেকসই কৃষি ও পরিবেশবান্ধব চাষের কথা বলা হলেও অন্যদিকে রাসায়নিক সারের ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এই অসংগতি কৃষি রূপান্তরের পথে বড় বাধা।
আহমেদ বোরহান প্রস্তাব দেন—

জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ পুনর্বিবেচনা করে নীতিগত দ্বৈততা দূর করা;

এগ্রোইকোলজি বা পরিবেশসম্মত কৃষি নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা;

জৈব সার উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানো;

কৃষক, কৃষাণি ও যুবদের ফার্মার প্রডিউসার সংগঠনে সম্পৃক্ত করা;

নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সেচ ও কোল্ড স্টোরেজে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা;

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের জন্য এগ্রোইকোলজি ভিত্তিক প্রশিক্ষণ চালু করা।

কৃষি সচিব ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, “বাংলাদেশের কৃষিতে সম্পদ ও সম্ভাবনা আছে, কিন্তু সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এই সমন্বয়হীনতা কাটাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৫০ সাল পর্যন্ত টেকসই কৃষি উন্নয়ন।”

তিনি জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১৩টি থিমেটিক কাজের ক্ষেত্র নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে পরিবেশসম্মত কৃষির উপাদানও রয়েছে। একই সঙ্গে জৈব সারে ভর্তুকি, কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন ও অ্যাগ্রো-প্রসেসিং শিল্প উন্নয়নের দিকেও কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, “জনসংখ্যা বাড়ছে, জমি কমছে—এ বাস্তবতা মেনেই আমাদের কৃষি পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি ও এনজিওসহ সব পক্ষের সহযোগিতা ছাড়া টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়া সম্ভব নয়।”

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর