বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো; কোনো রাজনৈতিক দলকে খুশি করা নয়।”
রোববার (২ নভেম্বর) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত ‘২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট: ফ্যাসিবাদের কালো থাবা ও আগামীর বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডা. তাহের বলেন,
“অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য হবে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। সুতরাং সংস্কার ও বিচার ছাড়া শুধু নির্বাচন দিলে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে না।”
তিনি আরও বলেন,
“বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৮ অক্টোবর জাতির গৌরবের দিন। ওই দিনে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের আত্মত্যাগের পথ ধরেই চব্বিশের বিপ্লব এসেছে। যদি পুরোনো ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসতে চায়, তবে নতুন লড়াইও অনিবার্য হবে।”
জুলাই সনদ নিয়ে তিনি বলেন,
“জুলাই সনদের বিরোধিতা মানে ফ্যাসিবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা। এক ব্যক্তির হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলে একনায়কতন্ত্র জন্ম নেয়। দশ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর আবারও ক্ষমতায় আসার আকাঙ্ক্ষা মানেই দেশকে পৈতৃক সম্পত্তি বানানোর মানসিকতা।”
তিনি যোগ করেন,
“প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতা কখনও বারবার ক্ষমতা চান না। যেখানে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে কেউ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, সেখানে বিএনপির আপত্তির কারণ জনগণ বুঝে। বিএনপি নিজে থেকেই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে, এখন তারা নিজেরাই তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ডা. তাহের বলেন,
“আপনি অতীতেও অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি, আশা করি এবারও করবেন না। আপনার প্রতিশ্রুতি ছিল সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—সুতরাং জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য নভেম্বরে গণভোট ও ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করুন। সংস্কার বাস্তবায়িত না হলে ড. ইউনূস হবেন ‘জিরো’, আর বাস্তবায়িত হলে তিনি হবেন ‘হিরো’।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি বলেন,
“২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ পেশিশক্তি ও অস্ত্রের জোরে জনগণকে পরাজিত করে দেশকে হাইজ্যাক করার চেষ্টা করেছিল। সেদিন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়। আমরা ৫ আগস্ট হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি, কিন্তু প্রকৃত চ্যালেঞ্জ এখন নির্বাচন।”
তিনি আরও বলেন,
“রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সংস্কার না হলে ভবিষ্যতে যে-ই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা আগের সরকারের মতোই ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করবে। এজন্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে নভেম্বরে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন জরুরি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ডা. আব্দুল মান্নান।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
বক্তব্য রাখেন—
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আশরাফ আলী আকন্দ,
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান,
মেজর (অব.) রেজাউল হান্নান শাহিন,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর ড. খলিলুর রহমান মাদানী,
সাবেক সচিব মাহবুবুর রহমান,
কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, কর্নেল (অব.) জাকারিয়া,
নয়া দিগন্ত সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবর,
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের অধ্যাপক নুর নবী মানিক,
ঢাকা আইনজীবী সমিতির এসএম কামাল উদ্দিন,
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম,
এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান।
এ ছাড়াও মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, ড. হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, মুহাম্মদ শামছুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: