[email protected] রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
৪ কার্তিক ১৪৩২

গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের নিয়ে বিতর্ক: আসলে ‘জুলাই যোদ্ধা’ কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ৬:৩২ পিএম

সংগৃহীত ছবি

গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর যশোরে সহিংসতার সময় সংঘটিত হামলা, লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়—যার মধ্যে একজন ছিলেন বিদেশি নাগরিক।

এসব ঘটনায় নিহতদের অনেকের নামই পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত ‘জুলাই শহীদ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তবে সম্প্রতি ওই তালিকা ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে—নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ সহিংসতায় অংশ নিতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছিলেন, আবার অনেকে আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থেকেও শহীদের মর্যাদা পেয়েছেন এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন একটি হোটেলে ওইদিন হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এক স্থানীয় সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,

“দড়াটানা থেকে গাড়িখানা মোড়ের দিকে আসা একটি মিছিলে কয়েকজন মোটরসাইকেলে ছিলেন। তারা হোটেলের সামনে পৌঁছে ভেতরে ঢুকে পড়ে। পরে বাইরে থাকা লোকজনও ভেতরে ঢুকে চেয়ার-টেবিল বের করতে থাকে। আগুন লাগার পর প্রথমে ফায়ার সার্ভিসকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, পরে নিজেদের লোক আটকা পড়েছে শুনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।”

এ ঘটনার পর নিহতদের মধ্যে ২৪ জনের নাম ‘জুলাই শহীদ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। জনমতের চাপে একজনের নাম বাতিল করে বাকি নামগুলো পুনঃযাচাই শুরু করেছে প্রশাসন।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, “হোটেল অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের বিষয়ে নতুন করে যাচাই-বাছাই চলছে।”

বিতর্কের পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠিয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের তালিকা পুনঃযাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে—আন্দোলনে অংশ না নিয়েও যাদের নাম তালিকায় যুক্ত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রথম দফায় ৮৩৪ জনকে শহীদ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। পরে আরও ১০ জনের নাম যুক্ত হয়। সর্বশেষ ৩০ জুন প্রকাশিত গেজেটে মোট শহীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৪৪ জন।
তবে আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত না থাকা এবং চারজনের নাম দ্বৈতভাবে প্রকাশ পাওয়ায় ৩ আগস্ট ৮ জনের নাম বাতিল করা হয়। ফলে বর্তমান হিসাবে শহীদের সংখ্যা ৮৩৬ জন।

অন্যদিকে আহতদের প্রথম তালিকায় ছিল ১২,০৪৩ জনের নাম, পরবর্তীতে আরও ১,৭৫৭ জন যুক্ত হয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩,৮০০।
সরকারি যাচাই-বাছাই শেষ না হলেও অভিযোগ রয়ে গেছে—আন্দোলনে অংশ না নেওয়া অনেকের নাম এখনো তালিকায় রয়ে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফারুক ই আজম বলেন,

“স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে শহীদদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ এখনো চলছে।”

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর