জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কারাবন্দি সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, এখন আর তার মন খারাপ হয় না।
কারাগারের জীবনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদেকুর রহমানের আদালতে হাজিরা দিতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পলক।
রাজধানীর বনানী থানায় মো. শাহজাহান হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চার আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। নিরাপত্তার জন্য তাদের মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো হয়। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে কঠোর পুলিশি প্রহরায় তাদের এজলাসে তোলা হয়।
এ সময় সাংবাদিকরা পলককে জিজ্ঞেস করেন, “সামনে নির্বাচন, আপনি কি অংশ নেবেন?” — জবাবে তিনি হেসে মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বলেন। এরপর যোগ করেন, “সব কিছুরই শেষ আছে।”
পলক আরও বলেন, “আগে মন খারাপ থাকত, এখন আর হয় না। নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। ভালো আছি, মানসিকভাবে শক্ত আছি।” তিনি অনুরোধ করেন, এই বার্তাটি যেন তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
কাঠগড়ায় তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী, রাশেদ খান মেনন ও আতিকুল ইসলাম। তারা আইনজীবীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা বলেন।
পরে বেলা ১১টার দিকে আদালতে শুনানি শুরু হয়। তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক মো. ইয়াছির আরাফাত মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, “আসামিরা এজাহারনামীয়। তাদের নির্দেশে শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হয়, যাতে নিহত হন মো. শাহজাহানসহ অন্তত ১২০ জন আন্দোলনকারী।”
শুনানি শেষে আদালত চারজনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর আবারও তাদের হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়।
পলকের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম (সাইফ) জানান, তার মক্কেল শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো আছেন, তবে কারাগারে প্রত্যাশিত সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। “একজন আওয়ামী লীগ নেতা সম্প্রতি জেল হাসপাতালে মারা যাওয়ায় পলক কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন, কিন্তু এখন মানসিকভাবে স্থিতিশীল হয়েছেন,” বলেন সাইফুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মো. শাহজাহান মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশ নেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিলে হামলা চালান। শাহজাহান বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে চার দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
এরপর নিহতের মা সাজেদা ১৮ ডিসেম্বর বনানী থানায় ৯৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: