[email protected] বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
২৩ আশ্বিন ১৪৩২

তদন্ত কর্মকর্তাকে আজও জেরা করবেন শেখ হাসিনার আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৫ ৯:১০ এএম

সংগৃহীত ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে আজ (বুধবার) তৃতীয় দিনের মতো জেরা করবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এই জেরা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যে উত্থাপিত বিভিন্ন তথ্য চ্যালেঞ্জ করে যুক্তি দেন যে, আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধ্য হয়েই গুলি চালায়নি, বরং তা ছিল অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ। দিনভর জেরা চললেও শেষ না হওয়ায় আদালত আজ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহ ও মামুনুর রশীদসহ অন্যরা।

গত ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয় এই জেরা। তার আগে ৩০ সেপ্টেম্বর আলমগীর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন। তিনি এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম ও শেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে তিনি জানান, গত বছরের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটে এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দিতে আলমগীর ট্রাইব্যুনালে যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন। এতে গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞসহ জুলাই-আগস্টের ভয়াবহতার দৃশ্য তুলে ধরা হয়। তিনি জানান, ঐ সময় তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল ছাত্র-জনতার ওপর। এসব সাক্ষ্য বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রচার পায়।

তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দির শুরু হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। সেদিন তিনি জব্দ করা ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন, যাতে আন্দোলনের সময়কার নির্মমতা ফুটে ওঠে।

২৫ কার্যদিবসে শেখ হাসিনার মামলায় মোট ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষে মামলাটি যুক্তিতর্ক ও রায়ের পর্যায়ে যাবে।

এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেন। তাকেও জেরা করেন আইনজীবী আমির হোসেন। মামলার অন্যতম আসামি ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়ে রাজসাক্ষী হন।

সাক্ষীদের বয়ানে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার বিবরণ উঠে এসেছে। শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা শেখ হাসিনা, কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পৃষ্ঠাসংখ্যা ৮ হাজার ৭৪৭, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা।

মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এ প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয়।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর