[email protected] মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
২২ আশ্বিন ১৪৩২

৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ: এনবিআরের সদস্য বেলালের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২৫ ৭:৪৬ পিএম

সংগৃহীত ছবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদ গোপনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এ এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় বেলাল চৌধুরী অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন।

২০২২ সালের জুলাই মাসে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে তিনি মোট ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সম্পদ দেখান। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে প্রকৃত সম্পদ পাওয়া যায় ১৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা—অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ তিনি গোপন করেছেন।

দুদকের হিসাব অনুযায়ী, দায়-দেনা বিবেচনায় বেলাল চৌধুরীর নীট সম্পদের পরিমাণ ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বৈধ আয় হিসেবে পাওয়া গেছে ১১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তবে বাস্তবে তার আয় অপেক্ষা অতিরিক্ত ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে।

দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম জানান, এনবিআরের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয় ২০১৯ সালেই। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ২০২২ সালের সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে বাস্তব সম্পদের অমিল পাওয়ায়, অবশেষে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় বেলাল চৌধুরীর নামে জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ও কোম্পানির শেয়ার রয়েছে—যেগুলো অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ক্রয় করা হয়েছে বলে দুদকের দাবি।

তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা, এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায়।

সম্প্রতি বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিদেশ সফর নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও, তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সিডনির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

তবে তার সরকারি অনুমোদন ছিল ইন্দোনেশিয়ায় একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করলে বেলাল চৌধুরী উত্তর দেন যে,

“আদালতের নিষেধাজ্ঞা পরবর্তীতে দুই মাসের জন্য প্রত্যাহার করা হয়। সরকারি জিও অনুযায়ী আমি ১৯–২৬ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ায় প্রশিক্ষণে অংশ নিই এবং সিডনিতে ট্রানজিটে ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করি।”

তিনি আরও জানান, দেশে ফিরে বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেছেন এবং কারণ দর্শানোর জবাব দিতে অতিরিক্ত ১০ কার্যদিবস সময় প্রার্থনা করেছেন।

এর আগে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি, দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, বেলাল চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে–বেনামে দেশে ও বিদেশে (বিশেষত কানাডায়) বিপুল স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ডেভেলপার, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও শেয়ার বাজারে আত্মীয়দের নামে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, বেলাল চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব, বিদেশ সফর ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর