‘শেখ হাসিনা বিরোধীপক্ষকে হিটলারের মতো দমন করতেন’ — মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দি

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীপক্ষকে ফ্যাসিবাদী নেতা অ্যাডলফ হিটলারের মতো দমন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে তিনি এ জবানবন্দি দেন। মামলার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করেন তিনি। মাহমুদুর রহমান এ মামলার ৪৬তম সাক্ষী।

জবানবন্দিতে মাহমুদুর রহমান বলেন,

“হিটলারের জার্মানিতে যেমন প্রথমে কমিউনিস্ট ও পরে ইহুদিদের গণশত্রু আখ্যায়িত করে তাদের এথনিক ক্লিনজিংয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, বাংলাদেশেও একইভাবে ২০১৩ সালে বিরোধী রাজনৈতিক শ্রেণিকে নির্মূলের লক্ষ্যে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নামে বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়। সরকারের কার্যক্রম তখন ওই আন্দোলনের নির্দেশে পরিচালিত হতো।”

তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান পারিবারিকভাবে সেনাবিদ্বেষী ছিলেন।

• পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে তিনি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্মম পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন।
• তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন।

মাহমুদুর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, শাহবাগ আন্দোলনের প্রভাবে আপিল বিভাগ আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা পরিবর্তন করে ফাঁসির রায়ে উন্নীত করে। তিনি একে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক “চরম অবিচার” বলে অভিহিত করেন।

তিনি আরও দাবি করেন—

• সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের রাস্তায় নামিয়ে এনে মানবতাবিরোধী অপরাধের আসামিদের ফাঁসির দাবিতে বাধ্য করা হয়েছিল।
• শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা “দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা”।
• ঢাকায় সফররত ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি প্রকাশ্যে না হলেও শাহবাগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এর আগে ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন জমা দেয় প্রধান প্রসিকিউটরের কাছে।