[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২৭ ভাদ্র ১৪৩২

ফল বিস্ময়কর হলেও অসম্ভব নয়: ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের একচেটিয়া জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২:১৬ পিএম

সংগৃহীত ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ ভূমিধস বিজয় পেয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফলাফল বিস্ময়কর হলেও তা মোটেও অসম্ভব ছিল না। তবে শিবিরের এমন প্রভাবশালী সাফল্যে হতবাক বিএনপি নেতৃত্ব থেকে শুরু করে ছাত্রদল ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ভোটের ফল বিশ্লেষণে সংশ্লিষ্টরা নানা প্রশ্ন তুলছেন—বিএনপি ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কোথায়, প্যানেল মনোনয়নে কি ভুল হয়েছিল, আর কী কারণে শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যন্ত ছাত্রশিবিরকে বেছে নিল? এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মীরা আত্মসমালোচনামূলক নানা মন্তব্য করছেন। অনেকেই বলছেন, ‘মাইম্যান’ কমিটি গঠনের প্রবণতা বাদ দিয়ে দক্ষ ও ত্যাগী নেতাদের দিয়ে সাংগঠনিক পুনর্গঠন জরুরি। বিএনপির একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন, এই ধাক্কা তাদের জন্য শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তারা নতুনভাবে জামায়াতে ইসলামীর মোকাবিলা কৌশল নির্ধারণ করবেন।

এই নির্বাচনে ২৮টি পদে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে ২৩টিতেই জয় পেয়েছে শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। ডাকসুর শীর্ষ তিন পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে। তবে অন্যান্য পদে ছাত্রদল উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখাতে পারেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, “এখনই মন্তব্য করা তাড়াহুড়ো হবে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ আছে। সব তথ্য জানা না পর্যন্ত সিদ্ধান্তে আসা ঠিক নয়।” তবে তিনি মনে করেন, ডাকসু নির্বাচনের ফল জাতীয় রাজনীতিতেও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও চূড়ান্ত প্রভাব বোঝা যাবে কয়েক মাস পর।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, শিবিরের এই জয় অবাক করা হলেও অবাস্তব নয়। তিনি বলেন, “ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই সুশৃঙ্খলভাবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছে। তারা ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের প্রার্থীরা পড়াশোনার দিক থেকেও তুলনামূলকভাবে যোগ্য। আবার কয়েকজনের ব্যক্তিগত ক্যারিশমাও ভোটে বড় প্রভাব ফেলেছে।”

তিনি আরও বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মতাদর্শগতভাবে পরিষ্কার অবস্থান পছন্দ করে। ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের আইডিওলজি স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছে। অন্যদিকে ছাত্রদল সাংগঠনিক ও আদর্শগত দুই ক্ষেত্রেই দুর্বল ছিল। বিশেষ করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের সাধারণ মানুষ ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান প্রত্যাশা করে। ছাত্রদল সেই শক্ত অবস্থান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।”

বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসু নির্বাচনের ফল শুধু ছাত্ররাজনীতিতে নয়, সামনের জাতীয় রাজনীতিতেও নতুন সমীকরণ তৈরি করবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর