[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২

যে কারণে এনসিপিতে পদত্যাগের হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ আগষ্ট ২০২৫ ১:৪০ পিএম

সংগৃহীত ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে গত দুই মাসে পদত্যাগ করেছেন প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মী।

সংগঠনের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম, যাচাই-বাছাই ছাড়াই কমিটি গঠন, বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদায়ন, দলের নীতি-বিচ্যুতি এবং অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এসব পদত্যাগের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে। একাধিক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি স্থগিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এনসিপি সূত্র জানায়, দলীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১ জুন থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৩৩টি জেলা ও প্রায় ২০০টি উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে দ্রুত ও যাচাই-বাছাইহীনভাবে এসব কমিটি গঠনের কারণে অভিযোগের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরিবারের সদস্যদের পদায়ন, আর্থিক লেনদেন এবং দলীয় নীতির পরিপন্থী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

শুধুমাত্র সিলেট জেলা থেকেই পদত্যাগ করেছেন ৯ জন। বিশ্বনাথ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা কমিটির একাধিক সদস্য পদত্যাগ করেছেন কমিটি ঘোষণার একদিনের মাথায়। পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন এটিএম তুরাবের ভাই আবুল আহসান জাবুর, রুহুল আমিন, ফাহিম আহমদ, এনামুল হক মারুফসহ অনেকে। তারা অভিযোগ করেন, আদর্শ ও নৈতিকতার অভাব, দল পরিচালনায় অযোগ্যদের প্রাধান্য ও পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয় লুকিয়ে কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির কারণেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 

৯ আগস্ট মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা কমিটি থেকে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন চার নেতা। প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা বলেন, “দায়িত্বপ্রাপ্তরা আদর্শিক, নৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে অযোগ্য। তাদের মাধ্যমে শিবচরের ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয়।”

 

৮ আগস্ট চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এ ইউ মাসুদ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করেন। অভিযোগ করেন, তাকে প্রধান সমন্বয়কারী করার কথা থাকলেও কমিটিতে যুগ্ম সমন্বয়কারীর পদ দেওয়া হয়েছে। আর্থিক লেনদেনকেও ইঙ্গিত করেন তিনি।

পরদিন ফরিদপুরের মো. রুবেল মিয়া (হৃদয়) পদত্যাগপত্রে লেখেন, “দলীয় সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড আমার ব্যক্তিগত আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমি গভীরভাবে হতাশ।”

এছাড়া শরীয়তপুর, সোনাগাজী, রাজশাহী, মতলব দক্ষিণ, বাগমারাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। অনেক নেতাই দাবি করেছেন, তারা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন দলীয় রাজনীতিতে অংশ নেবেন না, তবুও নাম ব্যবহার করে তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

 

এনসিপির মাদারীপুর জেলা ও সদর উপজেলা কমিটি সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আব্দুল্লাহ আদিল ও রাতুল হাওলাদারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শেরপুরের নালিতাবাড়ীতেও মাত্র দুই দিনেই কমিটি স্থগিত হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির নেতা নিজাম উদ্দিনকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা গ্রহণের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজশাহীর নেতা নাহিদুল ইসলামকে মারধরের ঘটনায় সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

 

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত জানান, “ফেসবুকে কেউ পদত্যাগ করলে সেটা আমাদের অফিসিয়ালি জানাতে হবে। এখন পর্যন্ত আমি কারও পদত্যাগপত্র পাইনি।”

দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক মোহাম্মদ রাকিব দাবি করেন, “জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির কিছু লোক আমাদের কমিটিতে ঢুকে পড়েছিলেন। এখন তারা বিতর্ক তৈরি করতে পদত্যাগ করছেন।”

শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান আবদুল্লাহ আল-আমিন বলেন, “অভিযোগ পেলেই আমরা প্রাথমিকভাবে শোকজ করি, পরে যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। কিছু নেতাকে বহিষ্কারের সুপারিশও করা হয়েছে।”

 

দ্রুত নিবন্ধনের প্রয়োজনে কমিটি গঠন হলেও যথাযথ যাচাই-বাছাই না করায় এনসিপি এখন তীব্র সমালোচনা ও নেতাকর্মীদের আস্থার সংকটে পড়েছে। চলমান পদত্যাগ ও অনিয়ম দলটির সাংগঠনিক কাঠামো ও নেতৃত্বের ওপর বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর