জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
গত কয়েক মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপের ভিত্তিতে সনদের খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে দেশের সংবিধান, নির্বাচন, বিচার, প্রশাসন, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কারের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো বাস্তবায়নের লক্ষ্য দীর্ঘ ৫৩ বছরেও পূর্ণতা পায়নি। বরং বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অকার্যকর হয়ে পড়ে।
২০০৯ সালের পর থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করা হয় বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়। এর পরিণতিতে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, খুন, দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠে।
এই প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এক সফল গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়, যাতে বহু নাগরিক প্রাণ হারান এবং আহত হন। গণআন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে রাষ্ট্র সংস্কারের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৭ অক্টোবর ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়:
এই কমিশনগুলো ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেয়।
২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টাকে সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলোর প্রধানদের সদস্য করা হয়।
কমিশনের কাজ ছিল বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছানো এবং জুলাই জাতীয় সনদের একটি খসড়া প্রণয়ন করা।
৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত প্রদান করে। এসব মতামতের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় দফার আলোচনায় ২০টি অগ্রাধিকারমূলক বিষয়ের ওপর আরও সমঝোতা গড়ে তোলা হয়।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’–এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিম্নলিখিত অঙ্গীকার করে—
সনদের পঞ্চম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় দফার আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা সনদের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে প্রণীত এই সনদটি ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রূপরেখা’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ সরকারের নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: