সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজব ও অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।
তিনি বলেন,
“বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে লুকানোর বা গোপন করার কিছুই নেই। কার কাছেই বা গোপন করব? আমরা সবাই এই দেশের মানুষ।”
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের জানাজা শেষে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটির বীর উত্তম এ কে খন্দকার কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
বিমান বাহিনী প্রধান বলেন,
“দুর্ঘটনাস্থলে অশান্তি বিরাজ করছে—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে আমাদের উচিত একে অপরের পাশে দাঁড়ানো, গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি নয়।”
তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমান বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
“গুজব ছড়িয়ে দেশের নিরাপত্তার এই স্তম্ভকে দুর্বল করবেন না।”
রক্ষণাবেক্ষণ ইস্যুতে বিমান বাহিনী প্রধান জোর দিয়ে বলেন,
“বিমান রক্ষণাবেক্ষণে আমরা কখনোই কোনো আপোষ করি না। প্রতিটি বিমানের নির্ধারিত আয়ুষ্কাল থাকে। এক যুগ বা দুই যুগ ধরে ব্যবহৃত হলেও যত্নবান রক্ষণাবেক্ষণে তা কার্যক্ষম থাকে। আমাদের টেকনিক্যাল টিম অত্যন্ত দক্ষভাবে নিয়মিতভাবে প্রতিটি বিমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে।”
তিনি বলেন, প্রযুক্তির দিক থেকে কিছু সরঞ্জাম পুরোনো হতে পারে, কিন্তু এগুলো যান্ত্রিকভাবে অকার্যকর নয়।
বিমান বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
“এই তদন্তে যদি কোনো ভুল-ত্রুটি পাওয়া যায়, তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিমান বাহিনী প্রধান গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন,
“পাইলট তৌকির ইসলাম দুর্ঘটনার সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন যেন বিমানটি খালি জায়গায় আছড়ে পড়ে। তিনি নিজের জীবন দিয়ে হলেও শতাধিক প্রাণ রক্ষা করেছেন।”
দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করে তিনি বলেন,
“গতকাল থেকেই এই সংকটময় সময়ে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা, অন্যান্য উপদেষ্টাবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, চিকিৎসক, ফায়ার সার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
এই বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ও সাহসী অবস্থান নিয়েছেন। জনমনে যে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে তাঁর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। গুজবের বিরুদ্ধে তথ্যনির্ভর অবস্থান নেওয়াই এখন সময়ের দাবি।
এসআর
মন্তব্য করুন: