[email protected] মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২

হাই কমোডের দুশ্চিন্তা, গ্রেফতার নয়—উত্তাল জুলাইয়ে ভিন্ন এক গল্প শোনালেন প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২৫ ১০:৩৪ পিএম
আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ১০:৩৬ পিএম

সংগৃহীত ছবি

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল দেশ।

সে সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে উঠে আসে একের পর এক প্রতিবেদন। আন্দোলন দমনে সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণও চোখ এড়ায়নি বিশ্ববাসীর। এই সময়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধান ছিলেন বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

সাংবাদিক হিসেবে সে সময় তিনি ছাত্রদের ওপর চলমান নিপীড়নের খবর বিশ্বমাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছিলেন। এতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি। তার গ্রেফতার এবং নির্যাতনের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো—গ্রেফতারের ভয় নয়, তখন সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ছিলেন ‘হাই কমোড’ নিয়ে। রোববার (২০ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে সেই সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি।

শফিকুল আলম লিখেছেন, “লন্ডনে কর্মরত বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের এক সাংবাদিক আমাকে প্রথম সতর্ক করেন, যে কোনো সময় আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। শেখ হাসিনার এক মন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগ এনেছিলেন। একই ধরনের সতর্কতা দিয়েছিলেন আল জাজিরার তানভীর চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন আন্তর্জাতিক সাংবাদিক।”

তারা জানিয়েছিলেন, দেশব্যাপী ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকলেও এএফপি ছিল একমাত্র আন্তর্জাতিক সংস্থা, যাদের সংযোগ সক্রিয় ছিল। এ সুযোগে অনেক দেশি-বিদেশি সাংবাদিককে প্রতিবেদন পাঠাতে সহায়তা করেন তিনি।

তবে এসব সত্ত্বেও গ্রেফতার নিয়ে ভীত ছিলেন না শফিকুল আলম। তিনি লেখেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম—তারা আমাকে নির্যাতন করবে না। কারণ আমি এএফপি’র ব্যুরো প্রধান এবং এটি একটি ফরাসি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা।”

তবে তার আসল উদ্বেগ ছিল ভিন্ন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমার আসল ভয় ছিল যদি আমাকে সাধারণ কারাগারের সেলে পাঠানো হয়, যেখানে হাই কমোড নেই। আমার হাঁটু ভাঙা, স্কোয়াটিং টয়লেট ব্যবহার করতে পারি না। আমি স্ত্রীকে বলেছিলাম, তার প্রথম কাজ হবে এমন একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া, যিনি নিশ্চিত করবেন আমি যেন জেলে হাই কমোড ব্যবহার করতে পারি।”

তিনি জানান, তার স্ত্রী বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। তিনি এই আশঙ্কা সহকর্মী, সাবেক সহকর্মী এবং শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকদেরও জানিয়েছিলেন, যেন তার পক্ষে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

শেষ পর্যন্ত সেই আতঙ্ক সত্যি হয়নি। আন্দোলনের চাপে স্বৈরাচার সরকার পিছু হটে, ছাত্র-জনতা অর্জন করে ঐতিহাসিক বিজয়। শফিকুল আলমও গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হন।

তবে হাই কমোড নিয়ে তার সেই বিশেষ দুশ্চিন্তা আজও রয়ে গেছে। পোস্টের শেষ লাইনে তিনি লেখেন, “আল্লাহ রহিম। আমি তখন জেলে যাইনি। কিন্তু আজও আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো—যদি কোনোদিন জেলে যেতে হয়, আমি কি হাই কমোডের সুবিধা পাব?”

এই ব্যতিক্রমী দুশ্চিন্তার গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাস্যরসের জন্ম দিলেও, সেই সময়কার সাংবাদিকিক সাহসিকতা এবং মানবিক বাস্তবতাও পাঠকদের মন ছুঁয়ে গেছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর