সড়কে প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণহানি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম বড় কারণ ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকসহ বিভিন্ন অননুমোদিত তিন চাকার যানবাহন।
রাজধানীসহ দেশের শহর ও গ্রামীণ সড়কে এসব যানবাহনের চলাচল দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে।
সরকার অবশ্য এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে, যাতে এসব বাহনের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে ইজি বাইকের চলাচল যেমন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনা, ছিনতাই ও চালক হত্যার মতো অপরাধ।
বিভিন্ন জেলায় ইজি বাইক ছিনতাই করতে চালকদের হত্যার ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, সিলেট, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঘটনার মামলা পর্যন্ত হচ্ছে না।
ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন জানান, গত ১০ বছরে দুষ্কৃতকারীদের হাতে অন্তত ১০ হাজার ইজি বাইক চালক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার।
তিনি বলেন, “আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, নিহত ও আহত চালকদের তালিকা করে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তথ্যমতে, ২০২১ সালের নভেম্বরে একটি খসড়া নীতিমালায় নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি ও ইজি বাইকের মতো যানবাহনের নিবন্ধন দেয়ার কথা বলা হয়।
তবে এখনো সেগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। নীতিমালাটি সময়োপযোগী করে সংশোধন করা হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এর আগেই ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যান বন্ধে আদেশ দেয়। ২০১৫ সালে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এই যানগুলো চলছেই।
বুয়েটের সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বাহন কারিগরি দিক থেকে সড়কের জন্য উপযুক্ত নয়। ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন মানহীন হওয়ায় এগুলোর নিয়ন্ত্রণে বড় সমস্যা হয়, বিশেষ করে দ্রুতগতির যানবাহনের পাশে চললে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইজি বাইকগুলো সাশ্রয়ী হওয়ায় সাধারণ মানুষ পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। ফলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলো স্থানীয়ভাবে চলাচলের অনুমতি দিয়ে যাচ্ছে।
২০১১ সালে ইজি বাইক আমদানি বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। ২০১৯ সালে বিআরটিএ একটি কমিটি গঠন করে, যারা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে—দেশে অন্তত ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার বাহন চলাচল করছে এবং এ খাতে প্রায় ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, ২০২৩ সালে ইজি বাইকের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হার ছিল প্রায় ২৮ শতাংশ। প্রতিবছরই এই বাহনের কারণে প্রাণহানি বাড়ছে, যদিও অধিকাংশ ঘটনার কোনো রেকর্ড রাখা সম্ভব হয় না।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব যান নিয়ন্ত্রণে না আনলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। প্রয়োজন দ্রুত নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ
এসআর
মন্তব্য করুন: