২০২৪ সালের ৭ জুলাই রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে অচল হয়ে পড়ে জনজীবন।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে সংগঠিত শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় নামে হাজারো শিক্ষার্থী; তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ, পথচারী ও যাত্রীরাও।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে ‘বাংলা ব্লকেড’ পরিণত হয় একটি সর্বজনীন আলোচনার বিষয়ে। আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকার শাহবাগ মোড়, তবে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, রংপুর, সাভার, সিলেট, দিনাজপুর, গাজীপুরসহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ৭ জুলাই সন্ধ্যায় ঘোষণা দেন,
“৮ জুলাই থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন—সব গ্রেডে অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে এবং আইন করে কোটা পুনঃবিন্যাস করতে হবে। নাতিপুতি ও পৌষ্য কোটাকে আমরা অযৌক্তিক বলেই মানি।”
তিনি জানান, আগামীকাল (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে নতুন করে ‘ব্লকেড’ শুরু হবে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীদের জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বাধা এলে ছাত্ররা হল ঘেরাও করার হুঁশিয়ারিও দেন।
এছাড়া, অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণাও দেন আন্দোলনকারীরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে এবং আগামীকাল ফার্মগেট পর্যন্ত বিস্তৃত হবে বলে জানানো হয়।
ঢাকা:
সকাল থেকে রাজধানীর আটটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, চানখাঁরপুল, আগারগাঁও, ফার্মগেট এলাকায় অবরোধ করে হাজারো শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল শেষে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। বিকেল চারটায় শুরু হওয়া অবরোধ রাত আটটা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে মিছিল শুরু হলেও পুলিশের বাধায় গন্তব্য পরিবর্তন করতে হয়। শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগানে প্রতিবাদ জানান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়:
সকাল ১১টা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়:
আন্দোলনকারীরা গান, কবিতা ও পথনাটকের মাধ্যমে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ জানায়। ৮ জুলাই থেকে একাডেমিক কার্যক্রম ও বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন তারা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া):
শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়:
দুপুর ১২টা থেকে বৃষ্টির মধ্যেই ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়:
বিকেল ৪টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ি অংশে অবস্থান নিলে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (দিনাজপুর):
শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন, পরে মিছিলসহ ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়:
বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাথালিয়ায় অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা):
বিকেল ৩টায় মিছিল নিয়ে আগারগাঁও মোড়ে অবস্থান নেন এবং সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে অবরোধ তুলে নেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিলেট):
শিক্ষার্থীরা বিকেল ৪টা থেকে দুই ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন।
৭ জুলাই সন্ধ্যায় আন্দোলনের শীর্ষ তিন নেতার—নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ—সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আলোচনা হয়। পরে হাসনাত জানান,
“প্রধানমন্ত্রীর একদল প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার জন্য আমাদের ডাকা হয়।”
৭ জুলাইয়ের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দেশের ছাত্র রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি এখন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—ন্যায্য দাবি মানা না হলে আন্দোলন চলবে অনির্দিষ্টকাল।
এসআর
মন্তব্য করুন: