অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ, মৎস্য, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা এবং যুব উন্নয়ন—বিশেষ করে শিক্ষা ও খেলাধুলা—ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন জাপানের প্রতি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) নির্বাহী সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়াজাকি কাতসুরার সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জাপান সব সময়ই বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। আমি সম্প্রতি জাপান সফর করেছি। সেখানে আমার এবং প্রতিনিধিদলের প্রতি যে আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা দেখানো হয়েছে, তা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।”
বৈঠকে মিয়াজাকি জানান, এশিয়ায় বাংলাদেশ জাপানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত সহায়তা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে তিনি জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে মাতারবাড়ি প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।” পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের সামুদ্রিক অর্থনীতির সম্ভাবনা সম্পর্কে বলেন, “আমরা জাইকার প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছি, বাংলাদেশ একটি সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপ নিতে চায়।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশি তরুণদের জন্য জাপানে উচ্চশিক্ষার বৃত্তি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “অনেক তরুণ জাপানে কাজ করতে চায়, কিন্তু ভাষাজনিত সমস্যা রয়েছে। আমরা প্রস্তাব করেছি, জাপানি ভাষা ও কর্মস্থলের আচরণ শেখাতে জাপানি শিক্ষকরা সরাসরি বাংলাদেশে এসে অথবা অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা দিতে পারেন।”
রোহিঙ্গা ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “হাজার হাজার তরুণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়ে উঠছে কোনো ভবিষ্যতের আশা ছাড়াই। তারা দিন দিন হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে—এটি একটি দুঃখজনক অবস্থা।”
মিয়াজাকি জানান, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জাইকা বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার এবং স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি, জাইকা আইসিটি খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা দুই দেশের স্থানীয় সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোম্পানিগুলোর যৌথ অংশীদারিত্বে বাস্তবায়িত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের মেয়েরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছে। আমরা তাদের জন্য হোস্টেল সুবিধা বাড়াচ্ছি, তবে তাদের স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণে আরও সহায়তা দরকার।” এ প্রসঙ্গে মিয়াজাকি জানান, জাপান বিভিন্ন দেশে নারী শিক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক পাঠাচ্ছে এবং নারীদের খেলাধুলায় সহায়তা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, রেলপথ নির্মাণ এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ ও অনুদান সহায়তার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে ওডিএ (Official Development Assistance) সহায়তা সীমা ৩০০ বিলিয়ন ইয়েন থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ বিলিয়ন ইয়েনে উন্নীত করার অনুরোধ জানান।
শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ সব সময় জাপানের বন্ধুত্ব ও অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।”
এসআর
মন্তব্য করুন: