[email protected] বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

বছর ঘুরে ফিরে এলো সেই জুলাই


প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২৫ ১:২৭ এএম

আজ ১ জুলাই।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই মাসটি এখন শুধু ক্যালেন্ডারের একটি সময় নয়, বরং গণ-আন্দোলন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের এক যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিশেষ করে গত বছরের জুলাই মাস—যা স্মরণীয় হয়ে আছে গণ-অভ্যুত্থান ও ছাত্র-জনতার বিপ্লবের জন্য।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যায় এমন এক অভ্যুত্থান, যার মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৫ বছরের একক শাসনব্যবস্থার। নির্বাচনে বিতর্কিত পন্থায় জয়ী হওয়া এবং স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে অভিযুক্ত একটি সরকার গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়।

এই অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়ে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর ৫ জুন থেকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় বিক্ষোভ, যেখানে প্রথম উচ্চারিত হয়—‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা।’

১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যে জমায়েত হয়ে দাবি জানায় পূর্বের বিতর্কিত প্রজ্ঞাপন বাতিলের। আন্দোলনের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করলে আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

১১ জুলাই হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে জানায়, সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি অনড় ছিল। সরকারের নিরুত্তরতা ও বিভিন্ন জায়গায় দমন-পীড়ন পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। 'বাংলা ব্লকেড' নামে দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন অসংখ্য শিক্ষার্থী।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ ও সরকারপন্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে। এরপরই আন্দোলনের ধারা মোড় নেয়।

১৬ জুলাই রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। আন্দোলনে সাধারণ মানুষও যুক্ত হন, আর তা পরিণত হয় গণ-আন্দোলনে।

১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে ‘জুলাই ৩৬’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়কালে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। স্বাধীন সংগঠনগুলোর হিসেবে এ সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে।

শেষপর্যন্ত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হেলিকপ্টারযোগে দেশত্যাগ করেন তিনি। তাঁর পতনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক মন্ত্রী-এমপি আত্মগোপনে চলে যান।

৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়, যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজকের এই দিন স্মরণ করায় একবছর আগের সেই রক্তাক্ত অথচ বিজয়ী জুলাইকে—যা শুধু একটি সরকার পতনের গল্প নয়, বরং জনগণের অধিকার আদায়ের এক প্রেরণাদায়ক অধ্যায়। 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর