[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

এসএসসি-এইচএসসিতে বন্ধ হচ্ছে ‘সহানুভূতির নম্বর’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৫ ৮:২৪ এএম

সংগৃহীত ছবি

দীর্ঘদিনের প্রচলিত ‘সহানুভূতির নম্বর’ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে দেশের পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থা।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় এখন থেকে আর ২৮ পেলে ৩৩ করে পাস করানো বা ২-৫ নম্বর অতিরিক্ত দিয়ে গ্রেড উন্নত করার অলিখিত নির্দেশনা বহাল থাকবে না। অপ্রাসঙ্গিক বা ভুল উত্তরেও নম্বর দেওয়ার যে প্রথা এতদিন চলেছে, তা এবার সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হচ্ছে।

শিক্ষার মানোন্নয়নে নতুন উদ্যোগ

শিক্ষার প্রকৃত মান যাচাই এবং খাতা মূল্যায়নের প্রক্রিয়াকে আরও বাস্তবভিত্তিক করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ফলে চলতি বছর থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার এবং জিপিএ ৫-এর সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে—এমন ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত দেড় দশক ধরে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ‘উদারনীতি’ অনুসরণ করা হতো। শিক্ষার্থী খাতায় যেকোনো কিছু লিখলেই পরীক্ষকদের মৌখিকভাবে নম্বর দিতে বলা হতো। এমনকি হাস্যকর ও ভুল উত্তরের জন্যও নম্বর দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। যেমন, “হাজী মুহম্মদ মুহসীনকে কেন দানবীর বলা হয়?”—এই প্রশ্নের উত্তরে এক শিক্ষার্থী লিখেছিল, “তিনি দানব ও বীর ছিলেন, তাই তাকে দানবীর বলা হয়।” আশ্চর্যজনকভাবে এই উত্তরের জন্যও নম্বর দেওয়া হয়েছিল।

শিক্ষাবিদদের মতে, দেরিতে হলেও এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। পরীক্ষার ফলে সাময়িকভাবে পাসের হার কমলেও, সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত দক্ষতা যাচাই সম্ভব হবে।

সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানে জোর

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, “জিপিএ ৫ পেলেও যদি ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পারে, তাহলে সে ফলাফলের মানে নেই। তাই আমরা এখন শিক্ষার্থীর প্রকৃত যোগ্যতাকেই মূল্যায়নের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করছি।”

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির বলেন, “আমরা খাতা মূল্যায়নে উদারতা বা কঠোরতার চেয়ে বাস্তবতা ও নিরপেক্ষতাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। লক্ষ্য শুধু বেশি জিপিএ ৫ নয়, বরং মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরি করা।”

অতীতের মূল্যায়ন ব্যবস্থা ও বিতর্ক

২০০১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমবার গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়। এ পদ্ধতিতে ৮০ বা তার বেশি নম্বর পেলে সর্বোচ্চ গ্রেড (জিপিএ ৫/এ+) দেওয়া হয়। ৩৩-এর নিচে ফেল বা ‘এফ’ গ্রেড ধরা হয়। এরপর প্রতি ১০ নম্বর ব্যবধানে একটি করে গ্রেড নির্ধারিত হয়।

২০০৭ সালে ‘স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন’ (এসবিএ) চালু হলেও শিক্ষক-পর্যায়ের দুর্নীতির কারণে এক বছরের মধ্যেই তা স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালে ‘ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ চালু করা হলেও তীব্র সমালোচনার মুখে তা বাতিল করা হয়।

মাদ্রাসা বোর্ডের অবস্থান

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নুরুল হক বলেন, “সারা দেশে ঘুরে আমি শিক্ষকদের স্পষ্টভাবে বলেছি—পাসের হার বা জিপিএ ৫ বাড়ানোর কোনো চাপ নেই। শিক্ষার্থীর যা প্রাপ্য, সেটাই সে পাবে। উদারতা নয়, বাস্তবতার ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করতে হবে।”

পরিসংখ্যানে জিপিএ ৫ ও পাসের হার

  • ২০০১ সালে পাসের হার ছিল মাত্র ৩৫.৮১%, যেখানে জিপিএ ৫ পেয়েছিল মাত্র ৭৬ জন।
  • ২০২১ সালে পাসের হার বেড়ে ৯৩.৫৮%-এ পৌঁছায় এবং জিপিএ ৫ পায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন।
  • বিগত এক দশকে ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল সবচেয়ে কম, ৭৭.৭৭%।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার পেছনে উদার মূল্যায়ন নীতিই প্রধান কারণ।


এই পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাস্তবভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ও দক্ষতার যথার্থ প্রতিফলন ঘটাবে এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর