বাংলাদেশে ফের সক্রিয় তৎপরতা শুরু করেছে রাশিয়ান জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম।
পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিশেষ আইনের আওতায় দরপত্র ছাড়াই উচ্চমূল্যে কূপ খননের কাজ পাওয়া এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি এবার ‘সরকার টু সরকার’ (জি-টু-জি) ভিত্তিতে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে।
জ্বালানি বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ মে রাশিয়ার নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে বসেন। সাক্ষাতে ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে পাঁচটি কূপ খনন ও একটি ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ করার প্রস্তাব দেন তিনি। বৈঠকে জ্বালানি সচিবও উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সকে প্রস্তাবটি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছি।”
গ্যাজপ্রম এর আগেও বাংলাদেশে মোট ১৭টি কূপ খনন করেছে—এর মধ্যে দুটি ভোলায়। সূত্রমতে, পেট্রোবাংলা প্রতি কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে গড়ে ১৫২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। অথচ দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স নিজের ব্যবস্থাপনায় একই ধরনের কূপ খননে সর্বোচ্চ ৮০ কোটি টাকা ব্যয় করে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ব্যয়ের তুলনায় গুণগত মানের দিক থেকে গ্যাজপ্রমের কাজ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে সরাসরি কাজ না করে স্থানীয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যা কাজের মান নিয়ে বারবার বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘বিশেষ ক্ষমতা’ আইন ব্যবহার করে গ্যাজপ্রমকে দরপত্র ছাড়াই কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। এসব কার্যক্রমে তৎকালীন সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা ও কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ ছিল।
বর্তমান সরকার ওই বিশেষ আইন বাতিল করায় গ্যাজপ্রম এবার জি-টু-জি কাঠামো ব্যবহার করে আবারও বাংলাদেশে কাজ করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। যদিও এখনও প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়নি, তবে প্রস্তাবটি নিয়ে জ্বালানি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বিশ্লেষণ করছে।
সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ:
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানি হিসেবে গ্যাজপ্রমের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থাকলেও, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় তাদের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। বর্তমান সরকার এখন দেখার বিষয়, কীভাবে স্বচ্ছতা ও অর্থনৈতিক সাশ্রয় নিশ্চিত করে এই প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
এসআর
মন্তব্য করুন: