[email protected] শনিবার, ৭ জুন ২০২৫
২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এক মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলে 'মূল্য' ১৮টি ফ্ল্যাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৫ জুন ২০২৫ ১২:২১ পিএম
আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ ১২:২৩ পিএম

সংগৃহীত ছবি

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নঈম জাহাঙ্গীরের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতিকে ১৮টি দামি ফ্ল্যাট ‘মূল্য’ দিতে হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন সমিতির কিছু বঞ্চিত সদস্য।

তাঁদের দাবি, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে পড়ে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘ভুয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় সুবিধা দেওয়া হয় রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনিকভাবে প্রভাবশালীদের।

মো. নঈম জাহাঙ্গীর মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, সমিতির অভ্যন্তরে দলীয় বিভাজনের জেরে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়।

অভিযোগকারীদের ভাষ্য, নঈম জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন বিএনপিপন্থী সদস্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এবং তাঁদের সদস্যপদ বাতিল করতে রাজনৈতিক সংযোগ কাজে লাগান তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. মোর্শেদুল ইসলাম।

সমিতির বরাদ্দ পাওয়া জমিতে ২০১০ সালে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এরপর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বঞ্চিত সদস্যদের অভিযোগ, গেজেট বাতিলের নেপথ্যে থাকা প্রক্রিয়ায় মন্ত্রী, সচিব, সাবেক পুলিশ প্রধানসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সমিতির সদস্য করা হয় এবং তাঁদের ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে ১৮টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সমিতির বর্তমান সদস্য সচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, “নঈম জাহাঙ্গীর একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। রাজনৈতিক কারণে তার গেজেট বাতিল করা হয় এবং যাদের ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে তারা অনেকেই অবৈধভাবে সদস্য হয়েছেন।”

নঈম জাহাঙ্গীর নিজেও এ অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, “সমিতির স্বার্থে প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দীর্ঘদিনের স্বীকৃতি সত্ত্বেও ষড়যন্ত্র করে আমার গেজেট বাতিল করা হয়।”

প্রাপ্ত তথ্যমতে, জামুকায় এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে নঈম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। তদন্তের ভিত্তিতে ২০১২ সালে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল করা হয়। এরপর আদালতে রিট করেন তিনি। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মধ্যেও ২০২২ সাল পর্যন্ত ভাতা পেয়ে আসছিলেন তিনি, যা পরে বাতিল হয়।

এদিকে, যাদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, সাবেক আইজিপি, সচিব ও রাজনৈতিক নেতাদের আত্মীয়স্বজন।

এসব বরাদ্দ বৈধ নয় দাবি করে সমিতির কয়েকজন সদস্য আদালতে রিট করেছেন এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষেও আবেদন করেছেন।

জাতীয় গৃহায়নের চেয়ারম্যান নূরুল বাসির জানান, “যাদের নামে জমি বরাদ্দ নেই অথচ ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের বিষয়ে আমরা অবগত। এটি এখন আদালতের বিচারাধীন।”

এছাড়া, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মো. মোর্শেদুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মামলার তদন্ত চলছে। বর্তমানে মোর্শেদুল ইসলাম কারাগারে রয়েছেন। 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর