ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এই বৈঠকে তিনি মোদির হাতে একটি বিশেষ ছবির ফ্রেম তুলে দেন। তবে সেটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন—কারণ, সেই উপহারে ছিল না শহিদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি, যা সাধারণত তিনি বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের উপহার দিয়ে থাকেন।
প্রথা অনুযায়ী, ড. ইউনূস ‘Art of Triumph’ শিরোনামে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের একটি বই উপহার দিয়ে থাকেন, যার কাভারে থাকে শহিদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। কিন্তু মোদির ক্ষেত্রে এই প্রচলিত রীতি অনুসরণ না করে তিনি উপহার দেন একটি ভিন্ন ধরণের ফ্রেম—যেটি ২০১৫ সালে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে মোদির হাতে থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণের মুহূর্তের ছবি।
এই ব্যতিক্রমী উপহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠেছে নানা প্রশ্ন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নিজে কোনো ব্যাখ্যা না দিলেও সাংবাদিক ও বিশ্লেষক সুমন রহমানের একটি পোস্ট নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে মতপ্রকাশ করেছেন।
সুমনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ড. ইউনূস সরাসরি ‘হিরোয়িক’ বার্তা না দিয়ে কূটনৈতিক কৌশলই বেছে নিয়েছেন। তিনি চাণক্যের মাণ্ডালা তত্ত্ব এবং কোৗটিল্যের দ্বৈতনীতির রেফারেন্স টেনে বলেন, ভারতের মতো রাষ্ট্রকে মোকাবিলা করতে হলে তাদের কূটনৈতিক ভাষাতেই কথা বলতে হয়।
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে ইউনূস ভারতের ওপর চাপ তৈরি করছেন। পাশাপাশি, আঞ্চলিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আলোচনার টেবিলে ভারতকে টেনে এনেছেন। আবু সাঈদের প্রতিকৃতি হয়তো একটি নৈতিক বার্তা দিত, কিন্তু এতে কূটনৈতিক মেসেজ ক্ষীণ হয়ে যেত।
সুমন আরও বলেন, “দুর্বলের প্রধান অস্ত্র হলো সবলের ভাষা ও কৌশলকে অস্ত্রে পরিণত করা—যাতে সবল নিজেই বুঝতে না পারে, কখন নিজের শক্তি তার বিপক্ষে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর যখন বোঝে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।”
এই কৌশলকেই তিনি বলেছেন "ইউনূস-ডিপ্লোমেসি"। যেখানে আবেগ নয়, রাজনীতির সূক্ষ্মতা আর কূটনীতির মঞ্চেই খেলা হয়।
এসআর
মন্তব্য করুন: