[email protected] শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
৪ বৈশাখ ১৪৩২

আইন মেনে চলাই মূল দায়িত্ব: ডিসিদের উদ্দেশে আইন উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ৩:৪৯ পিএম

ফাইল  ছবি

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রধান দায়িত্ব হলো আইন ও নীতিমালা অনুসরণ করে জনগণের সেবা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, “আইনে যা আছে, নীতিমালায় যা বলা হয়েছে, সেটাই মেনে চলুন। আপনাদের আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা একেবারেই অনুচিত।”

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনের শেষ দিনে পঞ্চম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এই অধিবেশনে আইন ও বিচার বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ডিসিদের উদ্বেগ ও সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা

ডিসিদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, “তাঁরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন, বাস্তবায়নে কী কী সমস্যা আছে, সেটি তাঁরাই সবচেয়ে ভালো জানেন।”

তিনি জানান, ডিসিরা বৈধতা ছাড়া বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর অপরাধীরা দ্রুত জামিন পেয়ে যাচ্ছে—এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ‘আদালতের দায়িত্ব হলো উপযুক্ত ক্ষেত্রে জামিন দেওয়া।’ তাই আইন প্রয়োগে আরও সমন্বয় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, “আমরা ডিসিদের জানিয়েছি, আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মামলার সমন্বয় ও সলিসিটর উইংকে আরও কার্যকর করতে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা তাঁদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।”

প্রবাসী কর্মসংস্থান ও টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে পরামর্শ

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের কয়েক মাস সময় থাকে, “এই সময়টিতে তাঁদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) নিয়ে আসা উচিত।”

তিনি জানান, ডিসিরা পরামর্শ দিয়েছেন, যেসব ব্যক্তি বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, তাঁদের একটি জাতীয় ডাটাবেজ তৈরি করা উচিত, যাতে শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়, বরং আগ্রহী সবাই অন্তর্ভুক্ত হয়। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা।

এ ছাড়া সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি আমাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি বাড়াতে সব কার্যক্রম আরও সমন্বিত হোক।”

প্রশাসনের শক্তি ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা

প্রশাসনের দক্ষতা ও ব্যবহার নিয়ে মত প্রকাশ করে আসিফ নজরুল বলেন, “দেশের সবচেয়ে মেধাবী কর্মকর্তারা ডিসি হন। কিন্তু পূর্ববর্তী সরকার তাঁদের জনগণের দমন-পীড়নে ব্যবহার করেছে, যা দুঃখজনক।”

তিনি বলেন, “যদি প্রশাসনের এই শক্তিকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো হয়, তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।”

উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, “ভবিষ্যতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, প্রশাসন ক্যাডারের বিপুল সম্ভাবনাকে নিপীড়নের পরিবর্তে জনগণের সেবায় ব্যবহার করবে। সংবিধানের নির্দেশনানুযায়ী প্রশাসনের দায়িত্ব হলো জনকল্যাণ নিশ্চিত করা।”

টিটিসির কার্যকারিতা বাড়ানোর উদ্যোগ

টিটিসির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অনেক টিটিসি তৈরি হয়েছে, কিন্তু প্রত্যাশিত সেবা মিলছে না। শুধু টিটিসি নয়, অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেই একই অবস্থা। বিল্ডিং আছে, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে, কিন্তু কার্যক্রম নেই। এটি আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।”

তিনি আশ্বস্ত করেন, “আমরা প্রাণান্তকর চেষ্টা করছি এসব সমস্যা সমাধানের জন্য। আমাদের লক্ষ্য, সরকারি সেবার মানোন্নয়ন করা এবং জনগণের জন্য বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া।”

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর