অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, এস আলম গ্রুপের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ১২টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা, অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “গত ছয় মাসে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যস্ফীতি কমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টের উন্নতি হয়েছে। তবে বিদায়ী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪.২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা পূর্ববর্তী হিসাবে ৫.৮ শতাংশ ছিল।”
সভায় জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি ‘সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার’ চালু করা হয়েছে, যা রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেছেন, “যারা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। জনগণের সম্পদ রক্ষায় কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, চিহ্নিত ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে এ বিষয়ে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রেস সচিব আরও জানান, প্রবাসী আয় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভিবাসন প্রবৃদ্ধিও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “এটি আশাব্যঞ্জক হলেও এখনই উদযাপনের সময় নয়।
বরং অভিবাসনের নতুন সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং ভিসা সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।”
অর্থনীতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা মোকাবিলা করে আরও ভালো অবস্থানে যেতে হবে।”
বৈঠকে বেক্সিমকোসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কিছু জটিলতা নিয়েও আলোচনা হয়, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
সরকারি নীতিনির্ধারকরা নিশ্চিত করেছেন যে, ব্যাংক খাতের দুর্নীতি কঠোরভাবে দমন করা হবে এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: